ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৬ দিনে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

ঝিনাইদহের ফুলের বাজার। ছবি : কালবেলা
ঝিনাইদহের ফুলের বাজার। ছবি : কালবেলা

বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ফুলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। ঝিনাইদহের কয়েকটি লাভজনক চাষের মধ্যে অন্যতম হলো ফুলচাষ। ঝিনাইদহ জেলা থেকে বছরে প্রাই দুইশ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। চলতি বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশব্যাপী দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের কারণে ফুলচাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। একদিকে ফুলের চাহিদা যেমন কমেছিল, অন্যদিকে পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হওয়ায় পুরোপুরি লোকসানে রূপ নেয় ফুলচাষ ও ব্যবসা। হরতাল আর অবরোধের কারণে কৃষকসহ ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছিল দিনের পর দিন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামের কৃষক নজরুল জোয়ারদার এবার ৩০ শতক জমিতে ২০ হাজার টাকা লগ্নি করে গাঁদা ফুল লাগিয়েছিলেন। আশা ছিল লাভের মুখ দেখবেন। দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের কারণে লোকসানে ছিলেন তিনি। ফুল পচনশীল হওয়ায়, পরবর্তী ফলন বাঁচাতে তিনি ও তার ছেলে দুজনে মিলে ফুল তুলে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি হতাশাই ভুগছিলেন। এ বছর ফুলের ফলন ভালো হয়েছিল কিন্তু দেশের রাজনীতি তাকে হতাশাই ফেলে দিয়েছিল। তবে হঠাৎ করেই ৬ দিনের ব্যবধানে তার পুরো দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেছে। ৬ দিন আগে এক ঝুপা ফুল বিক্রি করেছেন ৪০-৫০ টাকা। সেই ফুল সপ্তাহ ঘুরতেই ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এতে করে বিগত দিনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফুল বাজারে নিয়ে আসছে। এক ঘণ্টার ব্যবধানে সবফুল বিক্রি শেষ। এরপর ব্যবসায়ীরা সেগুলোকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে যে গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছিল ৪০-৫০ টাকা ঝুপা। সেই ফুলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা ঝুপা। এভাবে অন্যান্য ফুলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দীর্ঘদিন পর লগ্নে বিবাহ বেড়েছে, এছাড়া বিজয় দিবস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমেজ শুরু হয়েছে। যার কারণে হঠাৎ করেই ফুলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নভেম্বরের শেষ দিকে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই বেশির ভাগ ফুল নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে উৎপাদনও কমে যায়। একদিকে ফুলের উৎপাদন কম অন্যদিকে বিজয় দিবসকে ঘিরে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধির কারেণ ফুলের বাজার বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় গাঁদা ফুলের বাজার গান্না ফুল বাজার। গান্না ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ফুলচাষি ও গান্না ফুল বাজারে ব্যবসা করি। আগে ঢাকায় এক গাড়ি ফুল পৌঁছাতে খরচ হতো ১৮-২০ হাজার টাকা। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বর্তমানে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। তারপরও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। অবরোধের কারণে গাঁদা ফুল প্রতি ঝোপা (১০ চোইন) বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। রীতিমতো ধস নেমেছিল ফুল ব্যবসায়। বিজয় দিবসকে ঘিরে ৬ দিনে পুরো ফুল বাজারে আগুন। নিজেই ৬ দিনে এক বিঘা জমি থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রয় করেছি। এখনো মাঠে ফুল রয়েছে। বিগত দিনে যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে পারব।

ঝিনাইদহ গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও ফুলচাষি মো. জামির হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগেও দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের কারণে ফুলের বাজার অনেক কম ছিল। আবার গাড়ি ভাড়াও বেশি ছিল। কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা হতাশাই ভুগছিল। যেখানে গত এক সপ্তাহ আগেও জারবারা ফুল বিক্রি হয়েছিল ৮-১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৩-৪ টাকা, গোলাপ ৬-৭ টাকা গাঁদা প্রকার ভেদে ৪০, ৫০, ৮০ সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। সেখানে বিজয় দিবস উপলক্ষে এবং হিন্দুদের বিয়ের লগ্ন আসায় ফুলের চাহিদা ব্যপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ি ভাড়া বেশি হলেও বর্তমানে পাইকারি গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা ঝুপা, জারবারা ২০-২৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৮-১০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৩-৪ টাকা, গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকা।

তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহের গান্না ফুল বাজার, বেলেডাঙ্গা ফুল বাজার, সামান্তা ফুল বাজারসহ জেলোর ৬টি ফুল বিক্রয় কেন্দ্র থেকে গত ৬ দিনে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি করেছে কৃষকরা। এর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে গাঁদা ফুল।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী জানান, জেলায় ২৫৪ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলাতে বেশি ফুল চাষ হয়। বর্তমানে গাঁদা ফুলের চাষ সবথেকে বেশি। এর পাশাপাশি জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা ও গোলাপের চাষও ব্যপক হারে বেড়েছে। এ বছর ফুলের চাষও অনেক ভালো হয়েছে। হরতাল ও বৃষ্টির কারণে ফুল চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিজয় দিবসকে ঘিরে এক সপ্তাহে যে বাজার পেয়েছে কৃষক, তা পূর্বের লোকসান কাটিয়ে উঠবে। এই জেলা থেকে আরও উন্নত ও মানসম্মত ফুল চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে লরির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেল সিএনজি, নিহত ১

টিয়া পাখি নিয়ে ভিডিও করে বিপাকে শিক্ষিকা 

গ্রিন কার্ডের আবেদনে আসছে বড় পরিবর্তন

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

গাজাবাসীর জন্য রোজা থাকছেন বিশ্বের ১৫০ আলেম

ডেনমার্ক দূতাবাসে চাকরির সুযোগ

সকালে উঠেই কোন ভুলের কারণে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি 

গাজা সিটির নতুন এলাকায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকেছে ইসরায়েলিরা

বেড়েছে স্বর্ণের দাম, আজ ভরিতে বিক্রি হচ্ছে কত টাকায়

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত?

১০

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬২

১১

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক দখলে নিলেন ববি শিক্ষার্থীরা

১২

আইভরি কোস্ট  / প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চান ৬০ জন

১৩

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

১৪

গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

১৫

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, দেখে নিন রাশিফলে

১৬

২৮ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

২৮ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

১৮

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৯

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

২০
X