গাজীপুরে রেললাইনে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জান্নাতুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়া, জুলকারনাইন আশরাফী ওরফে হৃদয়, শাহানুর আলম, সাইদুল ইসলাম ও সোহেল রানা। তারা সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরের ভাওয়াল গাজীপুর ও রাজেন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুরগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ট্রেনযাত্রী আসলাম মিয়া নিহত ও লোকো মাস্টারসহ ১০ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তদন্তে নামেন।
তদন্তের একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুস্কৃতকারী জান্নাতুল ইসলাম ও মেহেদী হাসানকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ঘটনায় জড়িতদের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পরে কোনাবাড়ি থেকে একটি হায়েস গাড়ি ঢাকা যাওয়ার কথা বলে ভাড়া করা হয়। কিন্তু ঢাকায় না গিয়ে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে তারা রেললাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে বের হন।
পথে তারা শিববাড়ি, জোড় পুকুরপাড়সহ আরও বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গাড়িতে উঠান। তারা গাজীপুর সদর থানার জোড় পুকুরপাড়ের ইবনে সিনহা তোহার বাড়ি থেকে রেল লাইন কাটার যন্ত্রপাতি এবং দক্ষিণ সালনার উসমান গণির ভাড়া দেওয়া বাঁশ বাগান রেস্টুেরেন্ট থেকে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে উঠায়।
পরে সরঞ্জামসহ তারা শিববাড়ি মোড় থেকে আরও দুজন ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠান। সময়ক্ষেপণ করার জন্য তারা রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া ও শহরের ভেতরে বিভিন্ন অলিগলিতে ঘোরাঘুরি করেন। আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে বনখড়িয়া এলাকায় ঘটনাস্থল থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্বে বনের পাশে গাড়ি রেখে তারা হেঁটে গ্যাস সিলিন্ডারসহ সরঞ্জমাদি নিয়ে বনখরিয়া চিনাই রেল ব্রিজের পাশে যান। সেখানে সুযোগ বুঝে ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে তারা ২০ ফুট রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।
এর কিছু সময় পর ওই রেল সড়কে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ভোর ৪টা ১০মিনিটের দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম ও ছাত্রদলের ত্বোহাসহ আটজন অংশগ্রহণ করেন।
এ ঘটনা ঘটিয়েই তারা গাড়ি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে চারজন গাড়ি থেকে নেমে যান এবং বাকি সদস্যরা পরবর্তীতে মিরপুরে গিয়ে নামেন। মিরপুরে নেমে তারা নিজেদের কাছে টাকা না থাকায় ফোনে অন্য একজনকে ড্রাইভারের নম্বরে টাকা পাঠাতে বলেন। সেই মোতাবেক ড্রাইভার সাইফুলের বিকাশে ৮ হাজার ১০০ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান আজমলসহ জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয়, শাহানুর আলম, মো. সাইদুল ইসলাম, সোহেল রানাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ১১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক বিএনপি নেতা আজমল ভূঁইয়ার বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের গোপন সভা হয়। সেখানে রেললাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা করা হয়।
ব্রিফিংয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনসহ জেলা ও মহানগর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রেলে নাশকতা ও হত্যার ঘটনায় কমলাপুর রেলওয়ে থানায় বৃহস্পতিবার মামলা হয়। রেলওয়ে কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাদী হয়ে কমলাপুর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে, গাজীপুর জেলা প্রশাসন এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আলাদা ৩টি কমিটি গঠন করা হয়।
মন্তব্য করুন