আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘাত ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত ১৫ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সংঘাতপূর্ণ এসব আসগুলোতে র্যাব পুলিশের পাশাপাশি একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকার পরও অতিরিক্ত আরও একজন ম্যাজিস্ট্রেট যুক্ত করা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কায়ছারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল-২ ( ভূঞাপুর-গোপালপুর), টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী), টাঙ্গাইল-৫ (সদর), টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর) ও টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে অফিস ভাঙচুর এবং সংঘাতের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তিনজন নৌকা প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাসহ চারজনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর) আসনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার আশরাফুল নৌকার মনোনয়ন প্রার্থীসহ ৪৫ জনের নামে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে চাকতা এবং মগড়ায় দুটি অফিস ভাঙচুর করে একদল সন্ত্রাসী। এতে ৭-৮ জন আহত হন।
এ ছাড়া টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে ভূঞাপুর কাঁচাবাজারের পেছনে ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স অফিসের দোতলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ও ভূঞাপুরে মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ গোপালপুরের মেয়র রকিবুল হক ছানার উপস্থিতিতে নির্বাচনী আলোচনা করা অবস্থায় নৌকার সমর্থক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুর নেতৃত্বে অফিস ভাঙচুর ও অতর্কিত হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় একজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে সংগ্রামপুর ইউনিয়নে দুটি নির্বাচনী অফিসে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হামলায় ৫ জন আহত হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, আমার কর্মীরা মাঠে কাজ করতে পারছে না। ভূঞাপুরের পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ, গোপালপুর পৌর মেয়র রকিবুল হক ছানা আমার গাড়ি ও অফিস ভাঙচুর করেছেন। এতে আমি আহত হয়েছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়। তিনি আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। তা ছাড়া আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তারা হামলা করে জনগণের মধ্য একটা আতঙ্ক তৈরি করতে চাচ্ছে। আমি দুবার নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছি। এবার শুরুতেই যেভাবে হামলা হয়েছে আমার আমলে তো এটা ছিল না।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান বলেন, আমার সংগ্রামপুর ইউনিয়নে দুটি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা রিটার্নিং বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রার্থী ডা. কামরুল হাসান বলেন, আমি নিজেও কোনো সন্ত্রাসী না, আমার কোনো কর্মী-সমর্থকরাও কোনো সন্ত্রাসী না। কাজেই আমরা কোনো সহিংস রাজনীতি করি না।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রার্থী মামুন-অর-রশীদ বলেন, আমরা এ নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না বিধায় অভিযোগ দেইনি। আর সেই কারণেই তারা নানা রকম অভিযোগের সুযোগ পাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা বানোয়াট। বরং আমার দুজন কর্মীকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে। এ ছাড়া আমার অফিসে নৌকার প্রতীক খুলে তাদের ঈগল প্রতীক লাগানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাচ্ছি। বিষয়গুলো আমি খুব গুরুত্বসহকারে দেখছি। এ ছাড়া আলাদাভাবে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে কথা দিয়েছে সুষ্ঠুভাবে আচারণবিধি মেনে কাজ করবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, র্যাব পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করেছি। সেখানে তারা কঠোর নজরদারি করছে। দুটি আসনে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটে তো আছেই তাছাড়াও আরও একজন যুক্ত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন