জহিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিলুপ্তির পথে যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের রস

খেজুর গাছের পরিচর্যা করছেন এক গাছী। ছবি : কালবেলা
খেজুর গাছের পরিচর্যা করছেন এক গাছী। ছবি : কালবেলা

বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয়টি ঋতুর দেশ আমাদের সোনার বাংলাদেশ। শরৎ ঋতুকে বিদায় জানিয়ে হেমন্তকে বরণ করে নেয় প্রকৃতি। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। ঋতু বৈচিত্র্যে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিয়েছে শীতের আগমনী বার্তা। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। কাক ডাকা ভোরে রস সংগ্রহ ও সন্ধায় চলছে গাছ পরিচর্যার কার্যক্রম। এবার কিছুটা আগেই গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে মৃদু শীত। আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে নালি গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রের প্রস্তুতি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে।

খেজুর রস ও গুড়ের জন্য যশোর জেলা বিখ্যাত। সুঘ্রাণ নলের গুড় জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাওয়া যায়। যা আবার জেলার চাহিদা পূরণ করে সারা দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। তার পরও যে রস, গুড় ও পাটালী তৈরি হয় তা দিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার ক্ষেতের আইলে, রাস্তার দুই ধারে ও ঝোপ-ঝাড়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। কিন্তু মানুষের সচেতনতা ও রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ আর তেমন চোখে পড়ে না। অপরদিকে ইট ভাটার রাহু গ্রাসে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনের পর দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। এখনও শীতকালে মানুষ শহর থেকে দলে দলে ছুটে আসে গ্রামে, বাংলার খেজুর রস ও গুড়ের স্বাদ নিতে। আগের দিনে সন্ধ্যার সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোল, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন প্রজন্মের কাছে তা এখন রূপকথার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু তা বাস্তব। যত বেশি শীত পড়বে ততবেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এক একটি খেজুর গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দিয়ে থাকে। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার টাওরা গ্রামের গাছি মো. ছিদ্দিক মোড়ল বলেন, এ বছর একটু আগে ভাগেই গাছ ঝোড়া বা কাটা শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। তারা আরও বলেন ভাটার কারণে অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তেমন একটা বেশি খেজুর গাছ না থাকায় গাছিরাও খেজুর রস সংগ্রহের জন্য তেমন আগ্রহ দেখান না।

আগে এক ভাঁড় রস বিক্রি হতো ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এক কেজি গুড় বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, আগে এক কেজি পাটালি বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।

বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য আর অপেক্ষার পালা। এ জন্য শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে গাছিদের কদর বেড়ে যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়কে লবণ ফেলে, কাফনের কাপড় পরে চাষিদের প্রতিবাদ

হত্যা মামলায় ২ ভাইয়ের ফাঁসি

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া

বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় মুক্তি পেলেন ৩৭ জন

রান্না শিক্ষার কোর্সে ভিড়, সুযোগ পেতে বসতে হলো পরীক্ষায়

মাইকেয়ার হেলথ হাসপাতালে মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারির অত্যাধুনিক মেশিন উদ্বোধন

আবারও কি ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে মেসি?

নেতানিয়াহুকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান এরদোয়ানের

ছবি আসল নাকি এআই দিয়ে তৈরি, মুহূর্তেই জানবেন যেভাবে 

ট্রাকচাপায় সড়কেই প্রাণ গেল বাবা-মেয়ের

১০

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর জামিন নামঞ্জুর

১১

আইনগত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সুপরিকল্পিত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে : প্রধান বিচারপতি

১২

রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ? জেনে নিন

১৩

অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ

১৪

যে কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচেন না রণবীর কাপুর

১৫

নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাহিদ, সম্পাদক মুদ্দাচ্ছির

১৬

ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কত প্রাণহানি হতে পারে, জানাল রাজউক

১৭

বিনা অনুমতিতে বিদেশে অবস্থান, চাকরিচ্যুত ইবির অধ্যাপক

১৮

গভীর রাতে বাড়িতে পুলিশ, প্রবাসী যুবকের মৃত্যু

১৯

ইতালিতে প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট নিয়ে বিএনপির কর্মসূচি

২০
X