আবারও সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার কারণে মৃত্যু, তাও আবার সেই লাল বাহিনীর কারণে। বলছিলাম আশাশুনি টু সাতক্ষীরা সড়কের ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদপুর বাজার মাদ্রাসা মোড় ও একই সড়কের ছাত্তারের মিল সংলগ্ন স্থানে দাঁড়ানো আলোচিত সমালোচিত ও সর্বস্তরের মানুষের কাছে ঘৃণিত লাল বাহিনীর কথা।
সড়কে দাঁড়িয়ে তিন চাকার (ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, গ্রাম বাংলা) যাত্রীবাহী যানবাহনের চালকদের কাছে চাঁদাবাজিই লাল বাহিনীর প্রধান কাজ। তাদের দাবি করা চাঁদার টাকা না পেলে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রীসহ ইজিবাইক আটক রাখা, গায়ের জোরে সড়কে চলাচল করতে না দেওয়া ও যাত্রীদের গন্তব্যের বিপরীতে ফেরত পাঠানো লাল বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত কাজ। দৈনিক কালবেলায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কিছু দিন লাল বাহিনীর সদস্যরা গা ঢাকা দিলেও আবারও তারা সরূপে সক্রিয় রাজপথে।
এর আগেও তাদের প্রতিবন্ধকতায় প্রাণ হারিয়েছে কয়েকজন। সম্প্রতি তাদের এমন প্রকাশ্য চাঁদাবাজির কারণে সময় মতো সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে চিকিৎসার অভাবে প্রাণ গেছে এক নবজাতকের।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে আশাশুনি টু সাতক্ষীরা সড়কের ছাত্তারের মিল সংলগ্ন স্থানে সঙ্ঘবদ্ধ লাল বাহিনীর দৌরাত্ম্যের কারণে ঘটনাটি ঘটে। নিহত নবজাতকের পিতার নাম বিকাশ চন্দ্র সানা। তিনি আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আরার গ্রামের অভিমন্যু সানার ছেলে।
নবজাতকের পিতা বিকাশ চন্দ্র সানা কালবেলাকে জানান, তার নবজাতক শিশু সন্তান ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে ইজিবাইকে রওনা হন। ঘটনার সময় ছাত্তারের মিল সংলগ্ন স্থানে পৌঁছানো মাত্রই তাদের ইজিবাইক আটক করে লাল বাহিনীর সদস্যরা। তাদের দাবিকৃত মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা না দেওয়ায় যাত্রী বহনকারী ইজিবাইক সামনের দিকে যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় লাল বাহিনীর সদস্যরা। উপায় না পেয়ে উল্টো পথ পাড়ি দিয়ে ফিংড়ি বাজার হয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিতে হয় তাদের। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
নবজাতকের মা বন্ধনা রানী সানা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওই ঘৃণিত লাল বাহিনীর কারণে আজ আমার কোল খালি হলো। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কোনো বিচার নেই। সনাতন ধর্মীয় মানুষ বাঁচল কী মরল তাতে কারও কোনো কিছু যায় আসে না। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনকে বাঁচতে দিল না লাল বাহিনী। আগামীতে ভিটা বাড়ি বিক্রি করে হয়তো ভারতে চলে যেতে হবে আমাদের। এসময় ডুকরে ডুকরে কেঁদে নবজাতক সন্তানের মৃত্যুর দায়ে লাল বাহিনীকে কঠোর শাস্তির দাবি করেন অসহায় মা বন্ধনা রানী সানা।
স্থানীয় ইজিবাইক চালকরা বলেন, সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীর ছত্রছায়ায় দিনভর সড়কে চাঁদাবাজি করে লাল বাহিনীর সদস্যরা। সচেতন মহলের কোনো ব্যক্তি প্রতিবাদ করলেই সড়কের ওপর প্রকাশ্যেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় প্রতিবাদকারীকে। লাল বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পোষ্যপুত্র হওয়ায় তাদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরা জেলা শহরের সাথে মফস্বল এলাকার সাধারণ মানুষের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অটুট রাখতে লাল বাহিনীর মতো চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাহিনীকে উচ্ছেদ করতে জেলা পুলিশ সুপারসহ সাতক্ষীরা-২ আসনের নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সর্বস্তরের জনগণ।
মন্তব্য করুন