মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাবাসীর জীবনযাত্রা জবুথবু ও স্থবির হয়ে পড়েছে। গভীর রাত থেকে বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির ফোঁটার মতো হালকা ঝড়েপড়া ঘন কুয়াশা শীতকে আরও কঠিন করে তুলেছে। হাঁড় কাপানো শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষজন। শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটে চলছেন তারা। রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা।
এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এদিকে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকায় জেলার বিভিন্ন রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহানগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই কাজে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়াও ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি ও ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শহরের রিকশাচালক মনির মিয়া বলেন, এত বেশি শীত যে, গরম কাপড় পরেও শীত মানছে না। হাত-পা বরফের মতো হয়ে গেছে। রাস্তায় চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে।
রিকশাচালক আতাউর রহমান বলেন, ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে যাত্রীরা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। রিকশা নিয়ে বসে আছি। ভাড়াও নাই। আয়ও কমে গেছে। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার রিকশাচালক হৃদয় বলেন, রাতে শীতে ঘুমাতেও পারিনি। এখন সকাল সকাল উঠে কাজে বের না হলে পেটেও কিছু পড়বে না। বাধ্য হয়েই কাজে বের হইছি।
ভ্যান গাড়িতে শীতের কাপড় বিক্রি করেন হোসেন মিয়া বলেন, কনকনে শীতে আমি ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। ভ্যান না বের করলে খাব কী, পেটের টানে বাধ্য হয়ে বসেছি। শীত বাড়লে বিক্রি বাড়ে, তাই এ শীতেও আমি ভ্যান নিয়ে ঘুরছি। তবে সারা দিন ঘোরা যাবে কিনা, বুঝতেছি না।
চা বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, দেওছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি শংকর রবিদাস ও চা শ্রমিক সংঘের নেতা রাজদের কৈরী বলেন, শীতের সময়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করে না। অধিকাংশ শ্রমিক পরিবার সদস্যরা শীতে কষ্ট পোহাচ্ছেন। তাছাড়া চা বাগানগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক।
উপেন রায় নামের এক কৃষক বলেন, সকালের সময় কনকনে ঠান্ডা থাকলেও দুপুরের পর থেকে রোদ ওঠায় অনেকটা স্বস্তিতে আছি। তবে আমরা শ্রমজীবী মানুষ সকালে কাজে যেতে না পারলে মালিক কাজে নেয় না।
শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সম্রাট কিশোর পোদ্দার জানান, শীতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিযায় আক্রান্ত হচ্ছে। বৃদ্ধরা হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আনিস জানান, তাপমাত্রা ওঠানামা করায় শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসেছে শীত। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন