জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার এজাহারে থাকা ২২ আসামির মধ্যে মামলা হওয়ার ২৫ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকি ১৭ জনকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।
গত ১৭ জুন সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় ২২ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ চারজন আদালতে বিচারকের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিরা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন ১৬ জন আসামি। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন প্রধান আসামি বাবুর ছেলে রিফাত, সহযোগী শামিম খন্দকার, রুবেল মিয়া, লিপন মিয়া, স্বপন মণ্ডল, শেখ ফরিদসহ এজাহারভুক্ত ১৭ আসামি।
মামলা হওয়ার প্রায় ২৫ দিন পরও এজাহারভুক্ত ১৭ আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহত নাদিমের পরিবার। এ ছাড়াও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের মামা বাবুল হোসেন বলেন, পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক। পুলিশ তো আসামি ধরছে না। ২৫ দিন পেরিয়ে গেল, প্রশাসন নির্বাক। কার ছত্রছায়ায় যে কী হচ্ছে, সেটা তো বুঝতে পারছি না। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই। আসামিদের না ধরা পর্যন্ত আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, আমরা সবাই ক্ষুব্ধ। ২৫ দিনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৭ আসামিকে এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ক্ষুব্ধ। আমাদের নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাও নেই।
নিহত রাব্বানীর স্বজনদের দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী ও বাবু চেয়ারম্যানের আত্মীয় ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় রয়েছেন পলাতক আসামিরা।
সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার চিত্র ধরা পড়ে পৌরসভার সিসি ক্যামেরায়। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই মামলার তৃতীয় আসামি রাকিবিল্লাহ রাকিবের বাড়ি। সেই হামলায় যুদ্ধাপরাধী ননী মিয়ার ছেলে রাকিবিল্লাহর ভূমিকা ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। একজন যুদ্ধাপরাধীর ছেলের হাতে একজন সাংবাদিক খুনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মুক্তিযোদ্ধারা। পলাতক রাকিবিল্লাহকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি তাদের।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, একজন যুদ্ধাপরাধী ননীর ছেলে রাকিবের হাতে খুন হয়েছে সাংবাদিক নাদিম। ননীর ছেলে হাতে যদি আমার ছেলে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যার সাহস পায়, তাহলে আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কী পেলাম। আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তাদের ধরার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, এই ঘটনার অন্তরালে বড় রাঘববোয়াল রয়েছে। তাদের নাম আসতে পারে। তাই এই বড় রাঘববোয়ালরাই আসামিদের লুকিয়ে রেখেছেন। তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। সে জন্যই আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, বাবু চেয়ারম্যানের দুজন আত্মীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আওতায় থাকতে পারে বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটাই আমার অনুরোধ।
এদিকে এজাহারভুক্ত ১৭ আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা।
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহিন আল আমিন বলেন, মামলাটি যখন ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর হলো, তখন আমরা আশাবাদী ছিলাম। পুলিশের চেয়ে ডিবি আরও ভালো ভূমিকা পালন করবে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার একটি সুযোগ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা এখনো ভালো কোনো খবর পাইনি। আমাদের কষ্ট ভেতরে আছেই। এখনো আমরা আশঙ্কাবোধ করছি যে, তারা গ্রেপ্তার হবে কি হবে না।
সাংবাদিক রব্বানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা হলেন—প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু, রেজাউল করিম, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিলন মিয়া, মো. গোলাম কিবরিয়া, জাকিরুল ইসলাম, শহিদুর রহমান, মো. তোফাজ্জল, আয়নাল হক, মো. কফিল উদ্দিন, মো. ফজলু মিয়া, মো. মুকবুল, মো. ওহিদুজ্জামান, নয়ন মিয়া, আন্দোলন সরকার ও শামীম গাজী। তাদের মধ্যে মামলার এজাহারে নাম আছে মাহমুদুল আলম বাবু, রেজাউল করিম, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিলন মিয়া, মো. গোলাম কিবরিয়ার। এই পাঁচজন ছাড়া বাকি আসামিদের নাম এজাহারে নেই। অর্থাৎ এজাহারে থাকা ২২ জনের মধ্যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছে, বাকি ১৭ জনকে পুলিশ এখনো ধরতে পারেনি।
গত ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। এর পরের দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ১৬ জুন বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গুমেরচরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাদিমকে।
এ বিষয়ে জামালপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলী বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন