ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার আছেন মাত্র দুজন। এই দুজন সাব-রেজিস্ট্রার সামলাচ্ছেন গোটা জেলা। ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সঠিক সময়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে না পেরে দাতা গ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সাব-রেজিস্টার থাকতে আগে যেখানে প্রতি মাসে ৫ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হতো, এখন সেখানে হচ্ছে মাত্র দুই হাজার। সরকারের এ খাত থেকে রাজস্ব কমেছে মাসে প্রায় দুই কোটি টাকা। জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় ২৮৯টি গ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এই উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার বদলি হওয়ার কারণে বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে। প্রায় চার মাস সাব রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না ঠিকমতো। একই অবস্থায় জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার।
ওই তিন উপজেলাতেও সাব-রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে সেখানেও ঠিকমতো জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। ২ জন সাব-রেজিস্ট্রারকে পালাক্রমে ৬ উপজেলার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে চরম দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরাা। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় শত শত জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। পাশাপাশি সরকার প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
এদিকে রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলার কথা থাকলেও অভিযোগ উঠেছে নিয়ম মানছেন না হরিণাকুণ্ডুর সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলাম। জেলায় সাব রেজিস্ট্রার সংকটের মুহূর্তে হরিণাকুণ্ডুর সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলামকে মহেশপুর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে গত মঙ্গলবার মহেশপুর উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রির দায়িত্ব পান তিনি।
সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, সকাল ৯টার সময় অফিস চালু হওয়ার কথা থাকলেও তিনি মহেশপুরে গেছেন বেলা ১১টায়। অফিসে পৌঁছে মাত্র দুই ঘণ্টা পর তিনি বের হয়ে আসেন। অথচ ঘটনার দিন অফিসের সামনে অন্তত দেড়শ দলিল ক্রেতা-বিক্রেতা অপেক্ষা করছিলেন। তাদের রেজিস্ট্রির কাজ সমাধান না করেই তিনি বাড়ির পথ ধরেন।
মহেশপুর উপজেলার বাউলী গ্রামে হাসান আলী বলেন, তিনি তিন সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছেন জমি রেজিস্ট্রির জন্য। গত মঙ্গলবার তার জমি রেজিস্ট্রির দিন ছিল। অফিসে এসে দেখি সাব-রেজিস্ট্রার আসেনি। আবার পরে শুনলাম তিনি এসে কিছুক্ষণ পরে চলে গেছেন।
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা কহিনুর খাতুন বলেন, তিনি দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন। রোজা রেখে সকাল থেকে অপেক্ষা করেন। ঘটনার দিন সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি না করেই কর্মস্থল ত্যাগ করলেন।
এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডুর সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলাম বলেন, ওই দিন আমি ৮০টা দলিল রেজিস্ট্রি করে এসেছি। দাতা গ্রহীতারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। এজন্য নিরাপত্তার কারণে আমি চলে এসেছি। আমি যদি রাত ১২টা পর্যন্তও অফিস করি তারপরও দলিল শেষ হবে না।
জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হয়তো দ্রুত সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন