আবাসন ব্যবসার নামে প্রতারণা করে ‘ফুটপাত থেকে রাজপ্রাসাদে’ যাওয়া সেই গ্রিন প্লাজা রিয়েল অ্যাস্টেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোটাহাট উপজেলার বাসিন্দা। বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবির কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অনেকগুলো প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। একটির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে থানা হাজতে আছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা এজাজুল হক ১২ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এজাজুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কাছে একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা নেন মোস্তাফিজ। কিন্তু তিনি ওই ফ্লাটটি না দিয়ে উল্টো আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নেন।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ৬৩ লাখ টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে আরও একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বোয়ালিয়া থানায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক নারী অভিযোগ দেন। পুলিশকে মধ্যস্থতা করে তার নামে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য মোস্তাফিজকে চাপ প্রয়োগ করতে অভিযোগটি দেন সেই নারী।
ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের ফ্ল্যাট মোস্তাফিজ ৬৪ লাখ টাকা দাম ধরে তার কাছে বিক্রি করেন। এরই মধ্যে মোস্তাফিজকে ৬৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে আরও ১১ লাখ টাকা দাবি করছেন তিনি। টাকা না দিলে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে অভিযোগ করে ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রি করে দেননি মোস্তাফিজ।’
তাকে গ্রেপ্তার করায় সন্তোষ প্রকাশ করে আবু হানিফ এক ভুক্তভোগী কালবেলাকে বলেন, ‘পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মোস্তাফিজকে প্রায় বছরখানেক আগে ভবন নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমি দিয়েছিলাম। চুক্তি হয়েছিল ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। সে আমার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘সেই চুক্তি বাতিল করে অন্য একজন আবাসন ব্যবসায়ীকে জমিটি বিল্ডিং নির্মাণের জন্য দিলে সে আমার সঙ্গে আরও বড় প্রতারণা ফাঁদ আঁটে। আমার একটি ব্যাংক একাউন্টের ফাঁকা চেক চুরি করে নিয়ে সেখানে দুই কোটি ৩২ লাখ টাকার এমাউন্ট বসিয়ে মিথ্যা চেকের মামলায় আমাকে ফাঁসায়। এই মামলায় আমাকে আবার আড়াই মাস জেল খাটতে হয়েছে।’
আবু হানিফ আরও বলেন, ‘প্রকৃতির বিচার খুব নির্মম। জমি আমার অথচ জেল খাটতে হয়েছে আমাকেই। আজ সে গ্রেপ্তার হয়েছে জেনে আমি খুশি হয়েছি। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’
মাত্র ১০-১২ বছর আগেও রাজশাহীর একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহকারী ছিলেন মোস্তাফিজ। পড়াশোনার খরচ জোগাতে প্রয়াত এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের কাছে থেকে প্রতারণা করে ৯০ লাখ টাকা এবং ৩ কাঠার একটি জমি নিয়ে নেন তিনি। এরপর থেকে মোস্তাফিজের উত্থান শুরু।
একের পর এক প্রতারণা করে মোস্তাফিজ বনে যান কোটিপতি। অল্প সময়ে ফুটপাত থেকে পৌঁছে যান ‘রাজপ্রাসাদে’। বাগিয়ে নিয়েছিলেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের মতো প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পদও।
শনিবার (২৩ মার্চ) ‘প্রতারণা করে ফুটপাত থেকে রাজপ্রাসাদ’ শিরোনামে কালবেলায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। একই শিরোনামে কালবেলার মাল্টিমিডিয়াতেও মোস্তাফিজের প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে। চাঞ্চল্যকর এই খবর প্রকাশিত হলে রাজশাহীতে সৃষ্টি হয় ব্যাপক তোলপাড়। এরপরই তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা মামলা করে।
মন্তব্য করুন