ফেনীর সোনাগাজীতে নজিরবিহীন লোডশেডিং চলছে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ সোনাগাজীর অধিকাংশ এলাকায় দৈনিক ৬ ঘণ্টাও ঠিকমত বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়নি। সর্বত্র যখন দাবদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই এই লোডশেডিং। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। সকাল, দুপুর কিংবা রাতে দীর্ঘ সময়ের লোডশেডিংয়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রোদ ও ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট। বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের জন্য অভিযোগ নম্বরে ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মিলছে না বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষের। এক সময় শুধু সন্ধ্যার সময় লোডশেডিং হলেও সম্প্রতি দিনে ও রাতে চলছে লোডশেডিং। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও মিনিমাম চার্জ দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিদ্যুতের অভাবে এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটছে। লম্বা সময় লোডশেডিং থাকায় ফ্রিজে থাকা দ্রব্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সোনাগাজী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আলম বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে একটানা লোডশেডিং চলছেই, বিদ্যুৎ গেলে আসার খবর নেই।
সাহেবের হাটস্থ ড্রীম এগ্রো ফিডস-এর চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন আহমেদ জানান, সকাল, দুপুর কিংবা রাতে দীর্ঘ সময়ের লোডশেডিংয়ে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মতিগঞ্জ ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল আমাদের এলাকায়।
সোনাগাজী বাজারের মুসল্লিরা জানান, বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মসজিদের নামাজ আদায়ের সময় প্রচণ্ড গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে তারাবিহ নামাজের সময় অবস্থা বেশি খারাপ। ইফতার-সেহরিতে বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকেনা।
এ বিষয়ে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সোনাগাজী জোনাল অফিসের ডিজিএম বলায় মিত্র বলেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ এর চাহিদা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব আমাদের, কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পেলে গ্রাহকদের সরবরাহ করব কিভাবে। আমাদের চাহিদা বেশি কিন্তু বরাদ্দ কম। এ জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন সোনাগাজী উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ারে ১৬-১৭মেগাওয়াট, অফ-পিক আওয়ারে ১১-১২মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে আমরা পাচ্ছি ৩-৫ মেগাওয়াট, তাই বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে লোডশেডিং নিয়ে কথা বলেছি। বিদ্যূৎ বিভাগ জানিয়েছে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিং নিয়ে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। এটা শুধু সোনাগাজী না সারাদেশেই এ রকম হচ্ছে। এ সমস্যা বেশি দিন থাকবে না।
মন্তব্য করুন