তনুজা শারমিন তনু , দিনাজপুর :
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

দিনাজপুরে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের প্রস্তুতি, চলবে বিশেষ ট্রেন

দিনাজপুরের গোর-এ শহিদ বড় ময়দান ঈদগাহ। ছবি : সংগৃহীত
দিনাজপুরের গোর-এ শহিদ বড় ময়দান ঈদগাহ। ছবি : সংগৃহীত

ছয় লাখ মুসল্লি'র সমাগমে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদ-উল-ফিতরের জামাতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহিদ বড় ময়দানে ঈদের এ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে অংশ নিতে আসা দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ঈদ জামাত প্রস্তুতি কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।

সভায় জানানো হয়, ঐতিহাসিক গোর-এ শহিদ বড় ময়দানে ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা সামশুল আলম কাশেমী। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মুসল্লিদের যাওয়া-আসার সুবিধার্থে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মিনারে সংস্কার কাজ, রং করা, ধোয়া মুছা, মাঠে মাটি ভরাটসহ আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন এবং পৌরসভা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এছাড়াও ঈদের নামাজে আসা মুসল্লিদের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দিনাজপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ তৈয়ব আলী দুলাল জানান, মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার। মাঠের আরেকটি অংশে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের গ্যারেজ। এছাড়াও পাশের স্টেশন ক্লাব, সার্কিট হাউজ, শিশু একাডেমি ও জেলা গণগ্রন্থাগারেও যানবাহন পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঈদগাহ মাঠে প্রবেশের জন্য মাঠের চারিপাশে তৈরি করা হচ্ছে ১৭টি তোরণ। শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে এবং মিনারে যাওয়ার রাস্তাতে তৈরি হচ্ছে তোরণ। মুসল্লিদের জন্য মাঠে ওযুখানা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি রয়েছে জেনারেটের ব্যবস্থা । লাগানো হবে শতাধিক মাইক, নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় র‌্যাবের জন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ মাচাং নির্মাণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের দিন অন্যান্য উপজেলা থেকে বাস সার্ভিস ছাড়াও যেসব উপজেলার সঙ্গে শহরের ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে সেসব উপজেলা থেকে মুসুল্লিদের জন্য স্টেশনগুলো থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠা একটি ঐতিহাসিক স্বপ্ন ছিল। এখন এটি একটি সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা দিনাজপুরবাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।

বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় ঈদগাহ মাঠের চিত্র নিয়ে এসে এ মাঠের নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়। সর্বপ্রথম মাঠের পশ্চিম প্রান্তে গত ২০১৫ সালে এ ঈদগাহ মাঠের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর পর এটি নামাজের জন্য পুরো প্রস্তুত করা হয়। এ ঈদগাহে রয়েছে ৫২টি গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দু’টি মিনার, এর মধ্যের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এসব মিনার আর গম্বুজের প্রস্থ হলো ৫১৬ ফুট। দেশের বড় ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ ঈদগাহ মিনারটি। প্রত্যেকটি গম্বুজে দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি সংযোগ। মিনার দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট, যে মেহরাবে খতিব বয়ান করবেন, সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দুটির উচ্চতা ৩০ ফুট নির্মাণে নান্দনিক স্থাপনা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদ সরকার জানান, প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। এখন দিনাজপুরেও ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সর্বপ্রথম এ বড় ঈদ জামাতের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার আন্তরিক তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে এ ঈদগাহ মিনার। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের ইমামতি করবেন দিনাজপুর সদর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। ঈদ-উল-ফিতরের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও যদি বৈরী আবহাওয়া হয় তাহলে বড় মাঠের পাশে মসজিদসহ আশপাশের এলাকার মসজিদ গুলোতে একযোগে নামাজ আদায় করা হবে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের সার্বক্ষণিক তত্বাবধানে গত ২০ দিন ধরে মিনারের সংস্কার ও মাঠের পরিচর্যার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন থাকবে । ঈদগাহের চার পাশে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদগাহ প্রাঙ্গণে সক্রিয় থাকবেন সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত হয়েছে চারটি বড় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে শহরজুড়ে। যাতে করে দূর দূরান্ত থেকে আসা যানবাহন গুলো শহরে প্রবেশ করতে ও বের হতে কোন সমস্যা না হয়। সবমিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদগা জামাতের নামাজ আদায়ের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত: গোর-এ শহিদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় কোনো মিম্বর ছিল না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। এরপর ২০১৭ নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গম্বুজগুলোর দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এর আগে ঈদগাহের মধ্যে দিনাজপুর স্টেশন ক্লাব থাকলেও এবার তা সরানো হয়েছে। ফলে বেড়েছে ঈদগাহের আয়তন।

সিরামিক্স দিয়ে পুরো মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই বছর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি ঐতিহাসিক গোর-এ শহিদ ময়দানে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুসল্লিদের জন্য ৩০০ অজুখানা, ৪০টি টয়লেট এবং খাবার পানি সরবরাহের জন্য ৫টি পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

ঈদ জামাত প্রস্তুতি কমিটির সভা শেষে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও কমিটির নেতৃবৃন্দ ঈদগাহ মাঠ ইফতারের আগে পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জানান, শোলাকিয়া একটি ঐতিহ্যবাহী মাঠ, তবে আয়তনের দিক দিয়ে দিনাজপুর ঈদগাহ মাঠ চারগুণ বড়। ৬৬ একর জমিতে বিস্তৃত। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ আর নেই। প্রতিবছর এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছে দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এবার কমপক্ষে ছয় লাখ মুসল্লি এই ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।এই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফাইনালের আগেই আইপিএলে থাকা খেলোয়াড়দের ফেরত চায় দক্ষিণ আফ্রিকা

বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে বারবার বাধা পায় ঢাবি প্রশাসন 

কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন

নওগাঁ জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রধান উপদেষ্টা

জুবাইদা রহমানের জামিন, দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন হাইকোর্ট 

ছাত্রদল নেতা সাম্যকে হত্যায় যুবদল সভাপতি-সম্পাদকের নিন্দা

সাম্য হত্যা / ক্যাম্পাসে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন সারজিস আলম

চট্টগ্রাম বন্দর নেপাল-ভুটান, সেভেন সিস্টার্সের হৃৎপিণ্ড : প্রধান উপদেষ্টা

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

১০

আয়নাঘর পরিদর্শন করলেন আরএফকে সেন্টারের প্রধান কেরি কেনেডি

১১

সাম্য হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চায় ঢাবি সাদা দল

১২

ভারতের প্রতিক্রিয়ায় জবাব দিলেন প্রেস সচিব

১৩

আ. লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র

১৪

জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিলের শুনানি চলছে

১৫

সাম্য আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ছাত্রনেতা : ছাত্রদল সভাপতি

১৬

চট্টগ্রামের আবহাওয়া নিয়ে দুঃসংবাদ

১৭

ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার চাইলেন মির্জা ফখরুল

১৮

আ.লীগের খবর প্রকাশ করলে দুই থেকে সাত বছর শাস্তি

১৯

চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

২০
X