তরমুজ একটি রসাল ফল। শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে এ ফলটি ভূমিকা রাখে। যে কারণে দেশজুড়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাজারে বেড়েছে তরমুজের চাহিদা। এদিকে এই তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে হ্রাস পাওয়া তরমুজের দাম কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আবারও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। মৌসুমের শেষ দিকে এসে চাহিদা অনুযায়ী তরমুজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। যার ফলে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে এই মৌসুমি ফল।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফলটি মৌসুমের শেষের দিকে হাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। হঠাৎ তীব্র গরম পড়ার ফলে বাজারে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। তাদের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দাম নিচ্ছে। এ কারণে তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তা ছোট ও মাঝারি আকারের। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু তরমুজ নষ্টও পড়ছে। বড় তরমুজ এখন খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন আগের বৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষেতে তরমুজ নষ্ট হয়েছে। যে কারণে তরমুজ সরবরাহও অনেক কমে গেছে। এসবের প্রভাবে বাজারে তরমুজের দাম কিছুটা বেড়েছে।
তবে এদিকে ক্রেতারা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে বাজারে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এই দাম বাড়ানোর কারণে বেশি দামে তাদেরকে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও বেশি দামের কারণে অনেকেই আবার তরমুজ কিনতে পারছেন না। যার ফলে মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা।
উপজেলার সদর বাজার, চান্দলা ও সাহেবাবাদ বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, তরমুজের দোকানগুলোতে হঠাৎ পড়া তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বেড়েছে তরমুজের চাহিদা। তবে ক'দিন আগেও যে তরমুজ দেড়শ বা দুইশ’ টাকায় বিক্রি করা হতো সেই আকারের তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এ নিয়ে কোথাও কোথাও ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হতেও দেখা গেছে। নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের তরমুজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তরমুজ না কিনে চলে যেতেও দেখা গেছে। তবে তরমুজের ভালোমন্দের নিশ্চয়তাও দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। অনেক ক্রেতা তরমুজ কিনে বাড়ি নিয়ে দেখছেন তরমুজ ভেতরে পচে গেছে। আবার কোনো কোনো তরমুজ ভেতরে এখনো পুরোপুরিভাবে লাল হয়নি।
উপজেলার চান্দলা বাজারে তরমুজ কিনতে আসা সুরাইয়া আক্তার কালবেলাকে বলেন, খুব বেশি গরম পড়ায় বাচ্চারা তরমুজ খেতে চেয়েছে। এ জন্য বাজারে তরমুজ কিনতে এসেছি। কিন্তু তরমুজের দাম অনেক বেশি। এর ওপর বিক্রেতারা তরমুজের ভালোমন্দের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।
উপজেলার সদর বাজারের ক্রেতা মামুন হক কালবেলাকে বলেন, 'গরম পড়েছে বেশি, তাই সাড়ে চারশ টাকা দিয়ে একটি তরমুজ কিনেছি। পরিবারের লোকজন মিলে একসঙ্গে খাব। তবে হঠাৎ করেই তরমুজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।'
উপজেলার সদর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নূর হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা পাইকারদের কাছ থেকে তরমুজ কিনি। প্রতিদিনই পাইকারি বাজারে তরমুজের দাম বাড়ছে। বেশি দামে কিনে এনে আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন বড় আকারের তরমুজ খুব একটা পাওয়া যায় না। এখনকার তরমুজগুলো ছোট ও মাঝারি আকারের।
সাহেবাবাদ বাজারের তরমুজ বিক্রেতা ছালেক মিয়ার সঙ্গে এক ক্রেতার তরমুজের দাম নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা চলছিল। বিক্রেতা বলছেন, আমি বেশি দামে কিনেছি তাই বেশি দাম চাচ্ছি। ওদিকে ক্রেতা বলছেন, হঠাৎ করেই তরমুজের দাম এত বাড়বে কেন? সবশেষে ওই ক্রেতা তরমুজের দামের কাছে হেরে গিয়ে তরমুজ না কিনেই চলে যান।
উপজেলার পশ্চিম বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল সরকার কালবেলাকে বলেন, কিছুদিন আগেও পানির দামে তরমুজ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। তরমুজের সিজনও শেষের দিকে। এখন বাজারে তরমুজের সরবরাহ কম। যার ফলে তরমুজের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে কোনো বিক্রেতা যেন কোনো ক্রেতার ওপর জুলুম না করে সে বিষয়ে আমরা বাজার কমিটি তৎপর রয়েছি।
মন্তব্য করুন