তীব্র গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে জনজীবন। এতে বাড়ছে নানা রোগের প্রকোপও। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া, জ্বর, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে ভিড় বেড়েছে নরসিংদী জেলা ও সদর হাসপাতালে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিনে নরসিংদী সদর ও জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ডায়রিয়া রোগী বেশি। টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচুর ভিড়। ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা সবখানেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়। ভর্তি রোগীর পাশাপাশি গত কয়েকদিনে আউটডোরে অন্তত কয়েক হাজার মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়।
এ ছাড়া নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বেডের বাইরে মেঝেতেও রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গরমের কারণে অনেক শিশু কান্নাকাটি করছে। শুধু বৈদ্যুতিক পাখার মাধ্যমে যেন তাদের আরাম হচ্ছে না, এ কারণে অনেক শিশুর মা ও স্বজনরা হাত-পাখা দিয়ে বাতাস করছেন।
নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. ফারহানা আহমেদ জানান, গত কিছুদিন যাবৎ তীব্র দাবদাহের প্রভাবে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীর চাপ বেড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরম উপেক্ষা করেই চিকিৎসা নিতে জেলা ও সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে রয়েছে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। তাছাড়া মানুষকে সচেতন করতে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিবপুর উপজেলার বান্দারদিয়া গ্রামের আবুল হোসেন জানান, রোববার (২৮ এপ্রিল) দিন আমার বাচ্চা প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত। জ্বরের এক দিন পর থেকে বমির সঙ্গে ডায়রিয়া শুরু হলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি রাখেন। বর্তমানে আমার সন্তানের অবস্থা কিছু ভালো। দেখি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে পারি কিনা।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, এ গরমে অসুস্থ থাকতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে বাইরের খাবার একেবারেই পরিহার করতে হবে। যেমন রাস্তার ধারে বসা ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে আখের রস, লেবুর শরবত, খোলা খাবার ইত্যাদি। বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে হিট স্ট্রোক, টাইফয়েড, ডায়েরিয়া, জ্বর, ঠান্ডা ইত্যাদি রোগী বেশি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণের তরল খাবার খেতে হবে। শিশু অথবা গর্ভবতি মহিলা এবং যাদের ডায়াবেটিক, হার্টের সমস্যা, এ ধরনের রোগীরা খুব প্রয়োজন ছাড়া তারা বাড়ির বাইরে যাতে না বের হয় সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তা ছাড়া একটানা কেউ কোনো কাজ করবে না, বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে কাজ করবেন। প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। ডাবের পানি খেতে পারেন। কারও প্রেশারের সমস্যা না থাকলে পরিমাণ মতো ওরস্যালাইন খেতে পারেন। বাইরের খোলামেলা খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুল কবীর বাশার কমল বলেন, অনেকে বাইরের রোদ থেকে বাসায় গিয়ে ফ্রিজের পানি পান করে কিংবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করে। এটি কখনোই করা যাবে না। বাসায় পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল কিংবা পানি পান করতে হবে। না হলে মাথাব্যথা, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গরমের সঙ্গে মানানসই কাপড় পরতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে।
মন্তব্য করুন