পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে দাবদাহে মরিচ উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন কমে যাওয়া ও বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের।
রোববার (৫ মে) সরেজমিনে দেবীগঞ্জ পৌর সদরের মরিচের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি ক্রেতারা কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কিনে বেশ কয়েকটি স্থানে জমা করে রেখেছেন। সপ্তাহে দুই দিন বসে মরিচের এই হাট। হাটের দিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ টন কাঁচামরিচ কেনাবেচা হয়। তবে, এদিন অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় মরিচের জোগান কিছুটা কম ছিল।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে বাজারে মরিচের জোগান স্বাভাবিক ছিল। সে সময় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র দাবদাহের কারণে মরিচের গাছ মরে যাওয়ায় এবং উৎপাদন কম হওয়ায় গত দুই সপ্তাহ থেকে কাঁচামরিচের জোগান কমে গেছে। এতে করে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ২৮ থেকে ৩০ টাকা বেশি।
আলমগীর হোসেন নামে এক মরিচ ব্যবসায়ী বলেন, আমি প্রতি হাটে পাঁচ থেকে সাত টন কাঁচামরিচ কিনে দেবীগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে হাটে তুলনামূলক মরিচ কম আসছে তাই মরিচের দাম বাড়তি। সামনে মরিচের দাম আরও বাড়তে পারে।
মো. ঈশা নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মরিচের জোগান কিছুটা কম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মরিচ কিনেছিলাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় আর এই সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। এ রকমভাবে জোগান কমতে থাকলে মরিচের দাম আরও বাড়বে।
এদিকে পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের দাম বেশি হওয়ায় খুশি কৃষকেরা। দেবীগঞ্জ বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি করতে আসা টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের বানেশ্বর পাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি। এর আগে তিনবার মরিচ বিক্রি করেছি। প্রথমবার ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং দ্বিতীয়বারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এই দামে বিক্রি করে খুব একটা লাভ হতো না। তবে আজকে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এতে করে গত কয়েকবারের তুলনায় কিছুটা লাভ হয়েছে।
দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চর তিস্তা পাড়া এলাকার বদিউজ্জামান নামে আরেক প্রান্তিক কৃষক জানান, ১০ শতক জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। প্রচণ্ড রোদের কারণে গাছ মরে যাচ্ছে, বেশি বেশি সেচ দিতে হচ্ছে। ইদানীং মরিচের ফলনও কমেছে। প্রথমে দাম কম থাকলেও ফলন বেশি ছিল। আর এখন ফলন কমে গেছে কিন্তু দাম বেড়েছে। এ রকম দাম শেষ পর্যন্ত থাকলে আশা করছি লাভবান হবো।
উল্লেখ্য, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের খরা মৌসুমে দেবীগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে এবার মরিচের আবাদ হয়েছে।
মন্তব্য করুন