কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজের গরু ও মাছের খামারে সহজে যাতায়াতের জন্য কৃষকের ফসলি জমির ওপর দিয়ে সরকারি টাকা ব্যয় করে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এমনকি যাদের ফসলি জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে তাদের কোনোপ্রকার ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, আওয়ামী লীগ নেতা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেনের বাকরা গ্রামে তিনি গরু ও মাছের খামার করেছেন। এ জন্য উপজেলার নাথেরপেটুয়া-হাসনাবাদ সড়ক থেকে জাকিরের ওই খামার বাড়ি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়। ফসলি জমির ওপর দিয়ে নির্মিত ওই রাস্তার সুফল একাই ভোগ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। ২০২১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নির্মিত ওই রাস্তাটির দুই পাশে কোনো ধরনের ঘর-বাড়ি নেই। রাস্তাটি দিয়ে মানুষের যাতায়াতের কোনো প্রকার প্রয়োজনীয়তাও নেই। শুধু চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের মালিকানাধীন সুবিশাল মাছের ও গরুর খামারের জন্যই সড়কটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্মাণ করেছেন তিনি।
স্থানীয় পরানপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমান বলেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও ভুক্তভোগীদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমার ২২-২৩ বছরের আয়-উপার্জনের টাকা দিয়ে আমিনাথেরপেটুয়া-হাসনাবাদ সড়কের পাশে সাড়ে ৪০ শতক জায়গা ক্রয় করি। আমাকে না জানিয়ে জাকির হোসেন আমার জায়গার ওপর দিয়ে ১৪ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটি তৈরি করেন। এতে আমার প্রায় ৩০ শতক জায়গা রাস্তার ভেতর পড়ে যায়। আর বাকি অংশ গর্ত করে মাটি নিয়ে গেছেন তিনি। এ কথাগুলো বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রবাসী।
তিনি আরও বলেন, আমি বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা পুলিশ সুপার, মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সৌদি আরব অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি। কিন্তু জায়গার ক্ষতিপূরণ ও জাকির হোসেনের বিচার হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত আরেক জমির মালিক জানান, আমার পৈতৃক সম্পত্তির ওপর দিয়ে জাকির তার নিজ খামারে যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। এজন্য আমরা চুপ করে আছি। এত দীর্ঘ রাস্তা হলো আমাদের জমির ওপর দিয়ে; কিন্তু ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা আমাদের জিজ্ঞেসও করেননি তিনি। নিজের সুবিধার জন্য সরকারের পুরো টাকাটা অপচয় করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা বলেন, যে সময় রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে, সে সময় আমি এখানে ছিলাম না। আমি যোগদানের পর বিষয়টি নিয়ে কেউ আমাকে অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এদিকে মঙ্গলবার (৭ মে) বেলা ১১টায় কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন জাকির হোসেন। সেখানে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ‘মনগড়া’ মন্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। জাকির বলেন, আমি একা। তারা সবাই ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মান্নান চৌধুরীর পক্ষে। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে আমি সব কেন্দ্রে পাস করব।
এক পর্যায়ে জাকির হোসেন মানুষের ফসলি জমির ওপর দিয়ে নিজের গরু ও মাছের খামারের জন্য দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন শুনে দ্রুত প্রেস ক্লাব ত্যাগ করেন তিনি।
জাকির হোসেনের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, জাকির হোসেন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে ঘোলাটে করতে চান। এজন্য তিনি কয়েকদিন ধরে উল্টাপাল্টা বকছেন।
মন্তব্য করুন