সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শামস্ ইশতিয়াক শোভনের থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত ৩ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
রোববার (১২ মে) ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে শোভনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বিএনপির এই প্রার্থী।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রত্যাহারকারী প্রার্থীরা হলেন- জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এসএম মারুফ তানভীর হোসাইন সুজন, সদর উপজেলা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি মো. বদরুজ্জামান বদু এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শামস্ ইশতিয়াক শোভন বিএনপিপন্থি প্রাণিসম্পদ কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্র কমিটির সাবেক মহাসচিব আফসার আলীর ছেলে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতাদের ম্যানেজ করে শুক্রবার (১০ মে) রাতে জেলার এক নেতার বাসভবনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য একপ্রকার দরকষাকষি শুরু হয়। পরে দামে বনিবনা হওয়ায় সবমিলিয়ে ৫০ লাখ টাকায় দফারফা হয়।
সূত্র জানায়, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শামস্ ইশতিয়াক শোভনের কাছ থেকে একজন ২০ লাখ, একজন ১৫ লাখ এবং একজন ৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়াও বাকি ১২ লাখ টাকা উচ্চপদস্থ নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে।
এদিকে, টাকার বিনিময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, সকাল থেকেই বিভিন্ন মানুষের কাছে শুনেছি টাকার বিনিময়ে আমাদের ছাত্রলীগের সাবেক দুই সভাপতিসহ ৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে নিশ্চিত আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কেউ একজন ভোটে জয়ী হতো।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির শোভনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী করা ঠিক হয়নি, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা তিন প্রার্থীর নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে যাওয়া শামস্ ইশতিয়াক শোভনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী কারণে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন সেটা আমি সঠিক জানি না। তবে আমার প্রতি সকলের সমর্থন ছিল।
টাকার বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আজ সকাল থেকে এ ধরনের গুঞ্জন শুনছি। টাকার বিনিময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আজ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সাতক্ষীরা সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় শামস্ ইশতিয়াক শোভন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
টাকা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মন্তব্য করুন