সাগরের জলরাশি থেকে ভেসে আসছে একটি জাহাজ। সেই জাহাজটি তীরের কিছুটা কাছাকাছি আসতেই চারদিকে শুরু হলো চিৎকার। জাহাজটি হাতের নাগালে আসতেই তীরে থাকা স্বজনদের কারও কারও চোখ বেয়ে আসছে জল, দীর্ঘদিন পর প্রিয় মুখটাকে জাহাজে দেখে কেউ কেউ শত বাধা ডিঙ্গিয়ে হাত মেলাতে ছুটে যায় জাহাজটির কাছে। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৫ দিন পর ‘এমভি জাহান মণিতে’ চড়ে চট্টগ্রামে ফিরলেন ২৩ নাবিক। সেই ফেরার চিত্রটা ছিল ঠিক এমনই অন্যরকম।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (এনসিটি) নম্বরে এসে পৌঁছান নাবিকরা।
তবে এমভি জাহান মণি নামের সঙ্গেও যেন জড়িয়ে আছে জলদস্যুদের ইতিহাস। মূলত ১৪ বছর আগে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছিল এমভি জাহান মণি নামের একটি জাহাজ। কাকতালীয়ভাবে ওই জাহাজটিও ছিল দেশের স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপ কেএসআরএম এর। সেইবার সেই জাহাজের নাবিকরা ১০০ দিন জিম্মি থাকার পর মুক্তিপণের বিনিময়ে দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। এমভি আবদুল্লাহও সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে ৩১ দিন ছিল। পরবর্তীতে মুক্তিপণের বিনিময়ে আবদুল্লাহর নাবিকরাও ছাড়া পায়। শেষ পর্যন্ত কাকতালীয়ভাবে ‘জাহান মণি’ নামে আরেকটি জাহাজে চড়েই চট্টগ্রামে ফেরেন নাবিকরা।
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া সেই জাহান মণি অনেক আগেই স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু জাহান মণি নামটির সঙ্গে আমাদের কোম্পানির দুর্বলতা রয়েছে। তাই সেই নামটি রেখে দেওয়ার জন্য একটি লাইটার (ছোট জাহাজ) জাহাজের নামকরণ করা হয়েছে জাহান মণি। আর এই জাহাজে করেই নাবিকরা এসেছেন।
এদিকে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের বরণ করতে উপস্থিত হয়েছেন স্বজনরা। পাশাপাশি কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত আছেন। এর মধ্য দিয়ে নাবিকদের স্বজন-পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো।
মন্তব্য করুন