নাঈম ইসলাম, তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বড়শিতে মাছ ধরে চলে ৪ বোনের সংসার

নৌকায় করে নদীতে মাছ ধরছেন চার বোন। ছবি : কালবেলা
নৌকায় করে নদীতে মাছ ধরছেন চার বোন। ছবি : কালবেলা

বরগুনার তালতলী উপজেলার নিউপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক হাচেন মোল্লা। রাহিমা বেগম, হালিমা বেগম, ফাতেমা বেগম ও জরিনা বেগম নামে তার চার মেয়ে। স্ত্রী ও চার মেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসার হাচেন মোল্লার। তার আয় দিয়ে এতজনের সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা ছিল তাদের। প্রায় অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হতো।

বাবার অভাবের সংসারে চার বোন বাধ্য হয়ে খরস্রোতা পায়রা নদীতে মাছ শিকার শুরু করেন। পরে স্বামীর সংসারে গিয়েও চলে মাছ ধরা। নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে কখনো জাল দিয়ে, কখনো বড়শি দিয়ে চলে তাদের মাছ শিকার। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। এভাবেই সংসার চালাতে ৪০ বছরেরও বেশি সময় বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন তারা।

চার বোন জানান, একসময় চার বোন লোকলজ্জার ভয়ে রাতে মাছ শিকার করেছি। পরে দিনে মাছ শিকার করা শুরু করি। আগে নদীতে মাছ বেশি ধরা পড়ত। একদিকে বড়শি অন্যদিকে জাল। এখন মাছ কম তাই আয়ও তেমন নেই। এখন কোনো দিন ২০০-৩০০ টাকার মাছ ধরতে পারি। কোনো দিন আরও কম।

৬২ বছর বয়সী হালিমা বেগম বলেন, মেয়ের ভরণপোষণ দিতে না পারায় বাবা অল্প বয়সে আামকে বিয়ে দেন। তবে সেই বিয়ে সুখের হয়নি। ছোটবেলা থেকে অভাবের মধ্যে বড় হইছি। অভাবের সঙ্গে বাবা ১১ বছর বয়সে বিয়ে দিছে। স্বামীর ঘরে গিয়ে দেখি অভাব পিছু ছাড়ে না। এরপর থেকে শুরু করলাম বড়শি দিয়া নদীতে মাছ ধরা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মাছ ধরি। মাছ শিকার ও সেই মাছ বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের তিন বেলা খাবার ‍জুটিয়েছি। এ মাছ ধরেই ছেলেমেয়েদের বড় করেছি। তাদের খাবারের কষ্ট পাইতে দেই নাই আমরা।

আরেক বোন ফাতেমা বেগম বলেন, একটা সময় আমরা বোনেরা যখন মাছ ধরতাম তখন এলাকার মানুষ হাসাহাসি করত। কিন্তু এখন প্রশংসা করেন। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। আমি নিউপাড়া থেকে খরস্রোতা পায়রা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বড়শি ফেলে মাছ শিকার করেছি।

জরিনা বেগম বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসার চলত না। তাই বোনদের সঙ্গে মাছ শিকারে যেতাম। আর এখন স্বামী প্যারালাইসিস হয়ে অচল। আমার আয়েই চলে সংসার। ছোটবেলা থেকে মাছ শিকার করলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তবে আগে যে অনাহারে থাকতাম এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। নিজে অনাহারে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝেছি। তাই সন্তানদের কখনো ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝতে দেইনি।

তিনি বলেন, মাছ ধরে দুই সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। মেয়েদেরও বিয়ে দিয়েছি। ছেলে জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালান। তবে স্বামী আর আমার কথা চিন্তা করে এখনো মাছ শিকার করছি।

স্থানীয়রা বলেন, তারা চার বোন। মাছ শিকার করে জীবন কাটল তাদের। তবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিতে পেরেছেন। তারা সবাই সমাজের সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলেন। সৎভাবে জীবনযাপন করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

১০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১১

সিঙ্গারে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

১২

মেসিহীন মায়ামিকে বাঁচাল রদ্রিগেজের দুর্দান্ত গোল

১৩

গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

১৪

লেভান্তের মাঠে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়

১৫

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৬

আকিজ গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়াও থাকবে নানা সুবিধা 

১৭

বাগেরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

১৮

যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করছে ভারত

১৯

২৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X