বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি গাছ আকন্দ

ভেষজ উদ্ভিদ আকন্দ। ছবি : কালবেলা
ভেষজ উদ্ভিদ আকন্দ। ছবি : কালবেলা

প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসালয়ের মহৌষধী গুণসমৃদ্ধ উদ্ভিদ আকন্দ। এর পাতা গ্রামাঞ্চলের মানুষের প্রাথমিক সেবাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। পাশাপাশি ফুল, মূল, রসাল আঠা, চূর্ণ ব্যবহার করে ঘরোয়া, কবিরাজি, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, হোমিও চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরিতে ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মানুষের বহুবিধ রোগ মুক্তি বা নিরাময়ে মন্ত্র শক্তির মতো কাজ করত এ উদ্ভিদ।

কিন্তু কালের পরিক্রমায় ভেষজ গুরুত্বের অভাবে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আকন্দ। এক সময় গ্রামীণ মেঠো পথের ধারে আকন্দ গাছ দেখা যেত। প্রকৃতির ইশারায় জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠত অনাদরে।

আকন্দ এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি মাঝারি ধরনের ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ। আকন্দ ফুল দুই রকমের- একটি সাদা, আরেকটি বেগুনি রঙের। ফল সবুজ, বীজ লোমযুক্ত। এর বর্ণ ধূসর কিংবা কালচে। আকন্দ সাধারণত সাত থেকে আট ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং এর পাতা পাঁচ থেকে সাত ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি আকন্দ গাছে ফুল ফোটে এবং মে থেকে জুন মাসের শেষের দিকে ফল ধরে। ফল পাকে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে।

হাকিম মাহফুজ জানান, এক সময় গ্রামীণ লোকজন এ গাছের পাতা ভাঙা-মোচকা, হাড়-জোড়, বাত ব্যথা, হাঁপানি শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করত। নতুন প্রজন্ম এ গাছ না চেনা বা বিশদ গুনাগুণ সম্পর্কে না জানায় মহামূল্যবান সনাতনী চিকিৎসা ব্যবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। ঝোপঝাড়, আগাছা মনে করে এর শেকড় উপড়ে ফেলছে।

চকপাড়া গ্রামের ইসমাইল কবিরাজ বলেন, এক সময় এলাকার সড়কের পাশে প্রচুর পরিমাণে আকন্দ গাছ দেখতে পাওয়া যেত। এখন আবশ্য আকন্দ গাছ দেখা যায় না। আমাদের মায়েরা দেখতাম বাতের ব্যথার জন্য আকন্দ গাছের শেক নিত, এতে করে ব্যথা উপশম হতো।

বিরামপুর মডার্ন ক্লিনিক হারবাল ডা. সামিদুল ইসলাম জানান, গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আকন্দ গাাছসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছ। একসময় এসব ঔষধী গাছ বন জঙ্গলে ও পতিত জমিতে পাওয়া যেত। কালের আর্বতনে তা হারিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার ভেলারপাড় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ইয়াকিন সরকার জানান, একসময় ব্যথানাশক হিসেবে মহাশংকর তেল, কেরোসিন, সরিষা তেল সহনীয় গরম করে মালিশের পর আকন্দ পাতা আগুনে হালকা শেক দিয়ে প্রলেপ দিত। তাতে দ্রুত ব্যথা উপশম হতো। এ চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল খরচ সাশ্রয়ী ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এখন বিলুপ্ত প্রায় আকন্দ গাছ। টুকিটাকি চিকিৎসায়ও খুঁজে পাওয়া যায় না।

বিরামপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. গোলাম রসুল রাখি জানান, আকন্দের রয়েছে অনেক ভেজষ গুনাগুণ। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া দাঁতের ব্যথা, গর্ভপাত, খোসপাঁচড়া, একজিমা, বহুমুত্র রোগ, পা মচকালে, পেটের জ্বালাপোড়া, বর্ণ, হজমকারক, শরীরের কোনো স্থানে ক্ষত হলে, আকন্দ গাছের পাতা ছাল, ফুল ফল, মূল ও কষ মানব কল্যাণে রোগ নিরাময়ে কাজ করে।

দিনাজপুর সামাজিক বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুরুন্নাহার জানান, আকন্দের বৈজ্ঞানিক নাম-ক্যালেট্রপিস, গোত্রের নাম প্রোসিরা এসক্লিপিয়েডিসি। পাতা রোমস ধরনের, পাতা ও ডাল হতে দুধের মতো সাদা রঙের, রসাল আঠা বের হয়। পাতা ব্যথানাশক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। যুগের পর যুগ এই গাছ নানাবিধ রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করলেও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।

দিনাজপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী জানান, আকন্দ গাছের পাতা ছিড়লে কিংবা কান্ড ভেঙে ফেললে দুধের মতো কষ (তরুক্ষীর) বের হয়। পাতায় এনজাইম সমৃদ্ধ তরুক্ষীর বিদ্যমান। এতে বিভিন্ন গ্লাইকোসাইড, বিটা-এমাইরিন ও স্টিগমাস্টেরল আছে। ফল সবুজ, অগ্রভাগ দেখতে পাখির ঠোঁটের মতো। সর্বত্র আকন্দ পাওয়া যায় এবং পরিত্যক্ত স্থানে বেশি জন্মে। ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন ও নেপালে এ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

অতর্কিত হামলায় ইসরায়েলের ৭ সেনা নিহত

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন ওএসডি

লাল ডিম না সাদা ডিম, কোনটির পুষ্টিগুণ বেশি

ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে দুটি সংবাদমাধ্যম, ট্রাম্পের ক্ষোভ

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন / বাঙ্কার বাস্টারেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু কেন্দ্র

ইরানে ফের হামলার চেষ্টা, ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত

রাজশাহী মহানগরীর থানা-ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠনে সতর্ক চিঠি

ভুল রক্ত পুশ করায় মৃত্যুর মুখে রোগী, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

একযোগে ৩৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

১০

চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা 

১১

খামেনির বিপদ কাটেনি, সামাল দিতে হবে নিজ জাতির ক্ষোভ

১২

ইরানে যুদ্ধের অবসান : তেহরানের বর্তমান পরিস্থিতি

১৩

মাঝ নদীতে ভাসছিল ৪০ যাত্রীসহ ট্রলার, এরপর যা ঘটল

১৪

বিএনপিতে দখলবাজ নেতাকর্মীর স্থান নেই : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

১৫

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম

১৬

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১৭

২৫ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৮

ফরিদপুরে বিএনপির কর্মী সম্মেলন স্থগিত

১৯

১৫ বছর পর দেশে এসে মর্মান্তিক খবর পেলেন নুরুদ্দিনের বাবা

২০
X