এক মাসের ব্যবধানে রাজবাড়ীতে পদ্মায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের দুই পাশে শুরু হওয়া ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে ২০০ মিটার এলাকা।
ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম, সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া এবং পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুরসহ নয়টি ইউনিয়নের ১৩টি পয়েন্ট।
এ ছাড়া ফেরি ও লঞ্চঘাট, স্কুল, মসজিদসহ প্রায় ৩০০ ঘরবাড়িও ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এর আগে গত মাসের শেষ দিকে নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। সে সময় ৬ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে ৫০ মিটার বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, ঘাট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই বারবার দেখা দিচ্ছে ভাঙন।
বিআইডব্লিউটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দুপ্রান্তেই ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। এরপর ঘাট কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী হাই ওয়াটার, মিড ওয়াটার এবং লো ওয়াটার লেভেলের প্রতিটি ঘাটে তিনটি করে পন্টুন স্থাপন নিয়ে বাধে জটিলতা। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে নকশা তৈরি করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। নকশার কাজ শেষ হলে দুই বছর ধরে জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় কাজ শুরুই করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটসংলগ্ন সাত্তার মেম্বারপাড়ার নিকবাল মোল্লা বলেন, তিনবার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছি। গত শুক্রবার ও শনিবার ভোরে ভাঙন চলে এসেছে ঘরের কোনায়। আতঙ্কে রাত জেগে ছিলাম। শুধু আমিই নই, আমার মতো আরো অন্তত ৩০০ পরিবারের একই অবস্থা।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা জয়নাল বলেন, ভাঙনের কারণে ঘর সরাতেই তারা দিশাহারা। নির্বাচনের সময় যারা ভোট চাইতে আসেন, ভাঙনের সময় তাদের আর দেখা যায় না। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে এ এলাকায়। পথে বসবে ঘাটের কয়েকশ দোকানি। ঘরবাড়ি হারাবে শত শত পরিবার। নদীতে বিলীন হবে স্কুল, মসজিদ, মন্দিরসহ অনেক স্থাপনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, শুধু গোয়ালন্দ ঘাট এলাকা নয়, ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে নদীপারের ১৩টি স্থান। তবে ভাঙন রোধে বিআইডব্লিউটিএ জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করলেও কাজের মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা নদী ক্ষণে ক্ষণে গতিপথ পরিবর্তন করে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন শুরু হলে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। একশ্রেণির মানুষ ব্যাগ কেটে নষ্ট করে। আবার জেলেরা নৌকা বাঁধার বাঁশ দিয়ে জিও ব্যাগ ছিদ্র করে। এ কারণে আবারো ভাঙন দেখা দেয়। রাজবাড়ীতে ৫৭ কিলোমিটার পদ্মা ও ৩৮ কিলোমিটার এলাকায় গড়াই নদীর গতিসীমা রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান মোল্লা বলেন, বারবার ভাঙনের জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষ দায়ী। ঘাট এলাকায় যখন ফেরি ভিড়ে, আবার যখন নদীর ওপারে যায়, তখন ফেরির পাখার আঘাতে পাশের এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয় না। ভাঙনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে এলাকাবাসী আন্দোলনে যাবে।
শুক্রবার (২০ জুন) ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহম্মেদ মোস্তফা। সে সময় তিনি বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট নিয়ে সরকারের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে নদীবন্দর করার কথা ভাবছে সরকার। এর আগে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেটির বরাদ্দ আরো বাড়বে, তাই এখনই কাজ শুরু হচ্ছে না। ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন