কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ড. ইউনূসের মামলা শুনানিতে তীব্র বাগবিতণ্ডা, সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কয়েকদফা তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনের চেকলিস্টে স্বাক্ষর গরমিল নিয়ে এ বাগবিতণ্ডার সূত্রপাত। বিতণ্ডার একপর্যায়ে আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করার কথা বললে ড. ইউনূসের আইনজীবী লিখিত আবেদনের জন্য সময় চান। পরে আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে জেরা করা শুরু হয়। এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে সাংবাদিকদের বের করে দেন বিচারক।

এ সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা কি ক্যামেরা ট্রায়াল যে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হলো!’ তিনি বলেন, আপিল বিভাগেও সাংবাদিকরা থাকেন। তাদের সরে যেতে বলা হয় না। তাহলে এখানে কেন? এ সময় বিচারক বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে বিচার শেষ করতে পারব না আমরা।’

পরে বিচারক সাংবাদিকদের এজলাসের পেছনের দিকে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

শুনানির একপর্যায়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন বাদীর কাছে জানতে চান, আপনি যখন কোথাও পরিদর্শনে যান, তখন মালিকপক্ষকে জব্দ তালিকা বা চেকলিস্ট দেন? জবাবে পরিদর্শক বলেন চাইলে এক কপি দেই। তখন ইউনূসের আইনজীবী বলেন, এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষকে কি কোনো জব্দ তালিকা বা চেকলিস্ট দিয়েছেন।

জবাবে বলেন, হ্যাঁ দিয়েছি। তখন ইউনূসের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মালিকপক্ষকে দেওয়া চেকলিস্ট আর কোর্টে দেওয়া চেকলিস্টের মিল নেই। এ সময় তিনি আদালতের কাছে এই মামলার বর্তমান বাদীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জি জানান। জবাবে আদালত লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেন।

এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুয়োমোটো আদেশ দেওয়া যায় না। এরপর ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আমরা আবেদন করব। এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের অপর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সাক্ষীর জেরা শেষ করেন।

জবাবে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আরও তিন দিন লাগবে। তিনি বলেন, সব ধরা পড়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবী জেনে গেছে। এ সময় দুপক্ষের আইনজীবীরা তর্কে জড়ান। দুপক্ষের আইনজীবীর চিৎকারের কারণে আদালত বলেন, আদালতের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। এ সময় হায়দার আলী বলেন, রায়ের পর জালিয়াতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আবেদন দেবেন।

এ সময় দুপক্ষের আইনজীবীদের চিৎকারের একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান। এরপর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবার আদালত বসেন। এ সময় ড. ইউনূসের পক্ষে সময় আবেদন করা হলে আদালত তা গ্রহণ করে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। পরে আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষীকে জেরার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। তারা পরিদর্শনের একটি লিস্ট আমাদের দেন। সেটি আজ আদালতে উপস্থাপন করে বলেছি, ওই লিস্টের ফটোকপি আমাদের দেওয়া হয়েছে। এখানে মাত্র একজনের স্বাক্ষর রয়েছে। কোর্টে যে লিস্ট দাখিল করা হয়েছে সেটি টেম্পারিং করা হয়েছে। সেই কপি আমাদের দেয়নি। এই চেকলিস্ট দিয়ে ড. ইউনূসকে আসামি করা হয়েছে। আমি বলেছি, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৫ ধারার ১ এর (ঘ) অনুযায়ী প্রধান পরিদর্শকসহ সব পরিদর্শক যারা এ টেম্পারিংয়ে (জালিয়াতি) জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হোক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো এতবড় একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ কাজ করা হলে সাধারণ ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা কোথায় থাকে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়।এ মামলায় গত ২২ আগস্ট ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি রাষ্ট্রপতির

অসুস্থ নারীকে তালাবদ্ধ করে রাখেন বিআরডিবি কর্মকর্তা

এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় পিতৃহীন সুরাইয়াকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

গায়ানায় রাজ সাকিবের, শ্রীলঙ্কায় ভঙ্গুর বাংলাদেশ

শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি / মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

জবির ভূমিদাতা কিশোরী লালের শততম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

শিক্ষকের ওপর হামলা, জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুলের পদ স্থগিত

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত গ্রেপ্তার

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোবাইলে সারচার্জ বন্ধে হাইকোর্টে রিট

মাংসপেশিতে চোট জাকেরের

১০

জবিতে ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে ৩ দাবিতে বিক্ষোভ

১১

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ / দেশে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা আড়াই হাজার

১২

বগুড়ায় আ.লীগ নেতার কারাদণ্ড

১৩

ফিরেই ঝলক, সাকিবের ব্যাটে দুর্দান্ত ফিফটি

১৪

রংপুর ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ

১৫

গায়েবি মামলার আতঙ্কে ২০ গ্রামের মানুষ

১৬

পিআর পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান উদ্বেগজনক : মামুনুল হক

১৭

সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মিলল ফায়ার সার্ভিসের গাভি

১৮

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আ স ম রব

১৯

মহড়া চলাকালে মালয়েশিয়ায় পুলিশের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

২০
X