বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, আদালতে কলিমুল্লাহ

আদালত প্রাঙ্গণে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। ছবি : সংগৃহীত
আদালত প্রাঙ্গণে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। ছবি : সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। শুনানিতে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বিচারক বলেন, ‘আপনি তো ফুলটাইম ঢাকায় থাকতেন, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতেন।’ তখন কলিমুল্লাহ বলেন, ‘না, আমি ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে। ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করেছিলাম বলেই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’

এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর দুদক তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘তিনি কোনো অর্থ আত্মসাৎ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বিধি মোতাবেক কাজ করেছেন। তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে কোনো কাজ করেননি। বয়স্ক বিবেচনায় যে কোনো শর্তে জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না।’

শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কোন সালে ভিসি হয়েছেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘তৎকালীন সরকার আমাকে ২০১৭ সালে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়।’ তখন বিচারক ফের বলেন, ‘আপনি তো ফুলটাইম ঢাকায় থাকতেন। আপনি ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিন ঢাকায় থেকেছেন।

তখন তিনি বলেন, ‘দিপু মনি অন্যায় আবদার করতেন। এটা মেনে না নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছেন। আমি ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি। তার বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলাম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দিপু মনি এগুলো ছড়িয়েছেন।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি ও আপনার মা একই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘তিনি (তার মা) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিজি ছিলেন। এ জন্য সরকার নিয়োগ বোর্ডে সদস্য করেন।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি কি ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম নই। আমার আগের ভিসির ধারাবাহিকতায় রক্ষায় এসব দায়িত্বে ছিলাম। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ দায়িত্বে থাকতে হয়েছে।’

এসময় বিচারক জানতে চান, ‘চার বছরে উন্নয়ন খাতে কোনো টাকা পেয়েছেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘আমার আগের ভিসি নুর নবীর সময় ৯৯ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি।’ তখন তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করেছিলাম।’ তখন দুদকের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, ‘তিনি ঢাকায় থাকতেন। টক শো করতেন নিয়মিত। তিনি কীভাবে ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেন?’ তখন কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমি রাতের বেলা টক শো করতাম।’ তখন বিচারক জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি না?

তখন দুদক জানায়, অন্য কোনো মামলা নেই। তখন বিচারক আসামির উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেটা তদন্ত হলে পুরাটা বেরিয়ে আসবে।’ তখন কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো চিঠিপত্র পাইনি। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়নি। সকালে বাসা থেকে আমাকে পুলিশ নিয়ে আসছে। এক পোশাকে একাই চলে এসেছি।’

তখন বিচারক বলেন, ‘কবরে-জেলখানায় একাই যেতে হবে। দুনিয়া থেকে যখন যাবেন সঙ্গে কেউ যাবেন না। যারা দুর্নীতি করে তারা কবরেও একা, জেলখানায় একা যাবে। আপনি কী করেছেন তা আলিমুল গায়েব জানেন, আপনিও জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে। আপনাকে জেলখানায় যেতে হবে। আপনি কারাবিধি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। কোনো ওষুধপত্র প্রয়োজন হলে আপনাকে দেওয়া হবে।’ এরপর বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়া হয়।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

এর আগে গত ১৮ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম বাদী হয়ে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক এ কে এম নূর-উন-নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করেন। তারা ৩০ কোটি টাকা মূল্যের বেশি চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়া করেন।

ঠিকাদারের রানিং বিল থেকে কেটে নেওয়া নিরাপত্তা জামানতকে এফডিআর হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখা এবং সেইউ এফডিআর ঠিকাদারকে লোন দেওয়ার জন্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট অনুমোদন তথা গ্যারান্টার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো আইন না থাকা সত্ত্বেও অগ্রিম বিল দেন এবং অগ্রিম দেওয়া বিল সমন্বয়ের আগেই বিলের বিপরীতে প্রদত্ত ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো অবমুক্ত করা হয়। প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ড্রইং বা ডিজাইন না মেনে সরকারি খাতে ক্রয় পদ্ধতির বিধিবহির্ভূতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্বাভাবিক হারে মূল্য দাখিল বা ফ্রন্ট লোডিং থাকা সত্ত্বেও পিপিআর ২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রস্রাবের সুনামিতে ভেসে যাবে পাকিস্তান, বিলাওয়ালকে মিঠুন চক্রবর্তী

মৎস্যজীবী দলের সাবেক আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের স্মরণসভা 

হোস্টেলে মেডিকেল ছাত্রীর লাশ, সুইসাইড নোটে যা লেখা

তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ নাহিদের

রাতের আঁধারে শত শত ট্রাকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ‘সাদা পাথর’

সাভারে টিসিবির পণ্য চুরি, বিপুল মালামাল উদ্ধার

ভুয়া ‘থানা’ খুলে চাঁদাবাজি, ভারতে গ্রেপ্তার ৬ প্রতারক

মেট্রো স্টেশনের নিচে ছিনতাইকারীর হামলা, পুলিশের এডিসি আহত

চট্টগ্রামে সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়ে হামলা

নারায়ণগঞ্জে ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪

১০

ষড়যন্ত্র রুখতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : টিপু

১১

‘কোনো উপদেষ্টা দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে ছাড় দেবেন না প্রধান উপদেষ্টা’

১২

আজিয়াটাকে বাংলাদেশে ৫জি সেবা সম্প্রসারণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

১৩

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর গেল কোথায়?

১৪

পদ দিয়ে একদিনেই সরানো হলো কেবিন ক্রু হাফসাকে  

১৫

ভারত থেকে আ.লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে : হাসনাত

১৬

বিশ্বের প্রথম মহাকাশ বিয়ে / বর ছিলেন মহাকাশে, কনে পৃথিবীতে

১৭

আ.লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ : স্বীকারোক্তি দিলেন মেজর সাদিকের স্ত্রী

১৮

৫৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি / বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা 

১৯

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ, পরিবর্তন আসছে বিধিমালায়

২০
X