কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২০ এএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

রাত পোহালেই শেখ হাসিনার মামলার রায়

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

রাত পোহালেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। এ লক্ষ্যে বেলা ১১টায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে রেজিস্ট্রার অফিস।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। রায়কে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সেনাসদস্য মোতায়েন নিশ্চিত করতে সেনাসদরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচিত এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

জানা গেছে, জুলাইয়ে সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে দ্রুত করা সম্ভব ছিল না। কারণ, প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে গেলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি করতেই কয়েক বছর লেগে যেত। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে বাছাই করে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করেছে। এই পাঁচ অভিযোগের ভিত্তিতেই সোমবার শেখ হাসিনার রায় ঘোষণা করা হবে, যার দিকে নজর থাকবে পুরো বিশ্বের।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি হলো গণভবনে বসে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালায়। এর মাধ্যমে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় আসামিদের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় এসেছে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের ওপর।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো, ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করা এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়নে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তাদের অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা প্রদান করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের এই কর্মকাণ্ড নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

তৃতীয় অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ড তাদের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্রের ফলাফল, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

চতুর্থ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয় ছাত্র নিহত হন। এ ঘটনাতেও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা পঞ্চম ও শেষ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের লাশ পুড়িয়ে ফেলা এবং গুরুতর আহত একজনকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এই ঘটনার পেছনে তিন আসামির নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্র ছিল, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্তর্ভুক্ত।

প্রসিকিউশন দাবি করছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, দেওয়া যুক্তিতর্ক, ভিডিও ও অডিও প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের মতে শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ শাস্তির যোগ্য। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকের হাতে। তারাই নির্ধারণ করবেন- জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা খালাস পাবেন নাকি সর্বোচ্চ দণ্ড মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিচারকদের কাছে আমৃত্যু কারাদণ্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজার অপশনও রয়েছে।

এদিকে বিটিভিতে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হবে জানিয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এটিই সর্বপ্রথম রায় হবে। অনুমতি সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনালে পড়া রায়ের অংশটুকু বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে দেশের সব গণমাধ্যম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট, পুলিশের তল্লাশি

জবিতে ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটি

নাশকতার প্রস্তুতির সময় আ.লীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার 

উপদেষ্টা রিজওয়ানার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ 

দেশের প্রথম এআই প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা প্রদর্শনী

স্থানীয়দের ভালোবাসায় সিক্ত বিএনপির প্রার্থী রবিন 

আবু সাঈদের মৃত্যু কীভাবে, জানালেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

সাবেক এমপি হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল পূজা উদযাপন পরিষদ

২০ বছরেও নির্মাণ হয়নি ধসে পড়া সংযোগ সড়ক

৩৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি

১০

দুই কৃষকের আড়াই লাখ টাকার পেঁয়াজ চারা নষ্ট

১১

র‍্যাবের অভিযানের সময় সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি গুলি, গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ

১২

মহাসড়কের বিভাজকে লাগানো গাছ কেটে ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

১৩

তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান সেলিমুজ্জামানের

১৪

কেরানীগঞ্জে থানায় আগুন

১৫

রাজধানীতে বিদেশি রিভলভারসহ ১ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার 

১৬

মারুফার সেই কান্না নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন জ্যোতি

১৭

আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো মাদকসেবী দেখতে চাই না : বাবর

১৮

এস আলমের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আদেশ স্থগিত

১৯

বিএনপির দুই প্রার্থীর নেতাকর্মীদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক

২০
X