বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) রেজিস্ট্রারকে অপসারণসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপাচার্য শূচিতা শরমিন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (০৪ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শূচিতা শরমিন এ কথা জানান।
এছাড়া উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার (০৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ২টার মধ্যে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে ভিসি ভবন এবং ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টাপাল্টিভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন শেষে ক্যাম্পাসে ভিসির অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিসি ভবনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শনিবার (০৩ মে) ঢাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে ক্যাম্পাসের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়েছে। দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সভায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাদের নামে যে মামলা ও সাধারণ ডায়েরি হয়েছে তা তুলে নেওয়া হবে।
উপাচার্য বলেন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুহসিন উদ্দীনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের পদে পুনর্বহালের বিষয়ে তিনি হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আদালত দেবেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক শিক্ষক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দিয়ে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি ক্যান্সার আক্রান্ত শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হক জিমি মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, ওই শিক্ষার্থী ববি কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তার আবেদন করেছিল। কিন্তু তার আবেদন কেন উপাচার্যের কাছে পৌঁছালো না সে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে, উপচার্যের সংবাদ সম্মেলনের আড়াই ঘণ্টার মাথায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনকে অপসারণের এক দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
রোববার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের নিচতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের দাবি উপস্থাপন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ। শিক্ষার্থীদের পক্ষে তিনি অতি দ্রুত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অপসারণ করার মধ্য দিয়ে একজন গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী বান্ধব উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানান। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শূচিতা শরমিন যোগদানের পর থেকে শিক্ষার্থীরা প্রথমে ২২ দফা এবং পরে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের দাবি তুলে ধরেন। কিন্তু উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। উল্টো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ক্যান্সার আক্রান্ত হলে ভিসি বরাবর আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করলেও তা স্বাক্ষরের অভাবে অনুমোদন পায়নি। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন ভিসির অপসরণ জরুরি। কেননা তিনি ভিসি হিসেবে বার বার অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।
তাই ভিসির অপসারণের এক দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দিতে বাধ্য হবেন বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের নিচতলায় ভিসি’র অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আপাচার্যের অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ ধরেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণসহ চার দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। এ আন্দোলন দমাতে গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কেএম সানোয়ার পারভেজ লিটন ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০-১২ জন অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
এর আগে উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশ গেট ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ববির ৩২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ মামলাটির বাদীও হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার কেএম সানোয়ার পারভেজ লিটন। সবশেষ উদ্ভূতকর পরিস্থিতিতে শনিবার ঢাকায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন