খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) প্রায় আড়াই মাস পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা। রোববার (০৪ মে) শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এ অবস্থায় কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা। সোমবার (০৫ মে) সভা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন একাডেমিক ভবন খোলা থাকলেও নেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। দীর্ঘদিন পর একাডেমিক কার্যক্রম চালু হলেও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনকল্পে সকাল সাড়ে ১০টায় নতুন ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. হজরত আলী শিক্ষক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে করেছেন।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. ফারুক হোসাইন বলেন, কেমন ব্যবস্থা নেবে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ধারণা দিয়েছে। আগামীকাল বেলা ১১টায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা হবে। সেখানে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় অধ্যাপক ড. আবদুল্লা আল ফারুককে সভাপতি করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও তাদের নিয়ে সাইবার বুলিংয়ের প্রতিটি ঘটনার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা কাজ করছেন। দোষীদের চিহ্নিত করার পর বিচারের জন্য তা কুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের আরেকটি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় পুনরায় আজ থেকে সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
গত, ১৮ এপ্রিল কুয়েট শিক্ষক সমিতি সাধারণ সভায় শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে আগ্রহী থাকলেও শিক্ষকরা সমিতির সিদ্ধান্ত ছাড়া ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই, তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। এমনিতেই আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব বিভাগের শিক্ষকদের কাছে গিয়েছি। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এ ছাড়া আমরা অফিশিয়ালি প্রেস ব্রিফিং করে ক্ষমা চেয়েছি। ডিএসডব্লিউ-এর কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, যেটা সব শিক্ষককে মেইল করা হয়েছে।’
কুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে ভুল-ত্রুটির জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক কোনো আচরণে যেতে চাই না। আবারও শিক্ষকদের কাছে গিয়ে আমরা ক্ষমা চাইবো।’
তিনি বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদেরও দাবি সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। বিচারের যে প্রক্রিয়া এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। আমরা চাই ক্লাসও শুরু হয়ে থাক, পাশাপাশি বিচার চলতে থাকুক। আমরা শিক্ষকদের কাছে প্রয়োজনে ক্ষমা চাইব। আমরা স্যারদের পা ধরে আলাদাভাবে মাফ চাইতে রাজি আছি। নতুন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অন্যায়ভাবে যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি ঢুকাতে চেষ্টা ও যারা দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করেছে তদন্তের মাধ্যমে এটার সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হোক, এটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দাবি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। ওই আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হজরত আলী।
মন্তব্য করুন