বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে তামাশা করেন বলে প্রশ্ন রেখেছেন ডাকসুর ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাঁড়িয়ে তিনি এ প্রশ্ন করেন।
আবিদুল বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনির্মাণের দ্বার খুলেছে। তারই প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তারিখ ও তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেল ঘোষণা করেছি। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে আমাদের সেই জোয়ার গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ যখন আমি ভিসি চত্বরে বাসে প্রচারে ব্যস্ত ছিলাম, আমার প্যানেলের প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছিল। ঠিক সে মুহূর্তে সাংবাদিকরা আমাদের ফোন দিয়ে জানালেন, যে ডাকসু নির্বাচন স্থগিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে জানিয়ে দিতে চাই- ডাকসু নির্বাচন যথাসময়েই হবে। সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার অধিকার কারোর নেই।
ঢাবি প্রশাসন ও ঢাবি নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়েছেন, যেখানে নির্বাচন বন্ধের ফাঁক-ফোঁকর রেখেছেন। অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪ এর বামজোট সমর্থিত নেত্রী শিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা নিয়ে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি রিটে বলেছেন, ছাত্রলীগের কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। সেখানে এস এম ফরহাদ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ইনস্টিটিউশন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন- তিনি ৫ আগস্টের আগেও পদত্যাগ করেননি, এর পরেও পদত্যাগ করেননি। তো তিনি কীভাবে প্রার্থিতা পান। সেই রিটের জন্য হাইকোর্ট নির্বাচনকে স্থগিত করেছিলেন।
আবিদ বলেন, আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই- এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন হতেই হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই রিটের শিশির মনিরকে আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করেছে। আজ আমাদের থাকার কথা ছিল কবরে, কিন্তু আছি এখানে। আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে প্রশাসন বসেছে, তাদেরকে কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বসানো হয়নি। যে ক্রাইটেরিয়ায় ছাত্রলীগকে বাদ দিলেন সেখানে ফরহাদকে রেখে যে ফাঁক-ফোঁকর রেখেছেন সেটার সুযোগ বিভিন্ন অপশক্তি নিচ্ছে।
এর আগে, বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। কিন্তু ঠিক তার পরেই চেম্বার জজ আদালত এ স্থগিতাদেশ স্থগিত করেন।
ডাকসু নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর। এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। আর সদস্যপদে সবচেয়ে বেশি ২১৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আর ১৮টি হলে ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ডাকসু নির্বাচনে এবার মোট ৪৭১ প্রার্থী ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৮ প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ফলে চূড়ান্তভাবে ৪৭১ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক ১১ জন ও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে ২১৭ জনের নাম চূড়ান্ত করে কমিশন।
মন্তব্য করুন