

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ব্রাকসু নির্বাচন কমিশনার ড. মোহসিনা আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে সকাল থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তপশিল ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ছাত্রশিবিরপন্থি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে এ তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রশাসন কালক্ষেপণের কৌশল গ্রহণ করছে।
জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ভোটের এ তপশিল নির্বাচন বিলম্বিত করা এবং ব্রাকসুকে দীর্ঘায়িত করার একটি প্রচেষ্টা। এ তপশিল পুনর্বিবেচনা করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাই।
আরেক সমন্বয়ক ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশনকারী গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর প্রতিফলিত হয়নি। এ তপশিল পুনর্বিবেচনা করে ডিসেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
এদিকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রশিবিরপন্থিরা। এ সময় তারা বলেন, ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এজন্য তপশিল পুনর্বিবেচনা করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের আয়োজনের দাবি জানানো হয়।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলবীর বলেন, নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়েছে। আমরা চাই ডিসেম্বরের শুরুতেই নির্বাচন আয়োজন করা হোক। তা না হলে শীতকালীন ছুটিতে নির্বাচন আয়োজন করা এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের ডামাডোলে ব্রাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
তবে জানুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তাদের দাবি, শীতকালীন ছুটি শেষে জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকবে এবং একটি শান্ত, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি মনোনয়নপ্রত্যাশী ও শাখা ছাত্রদল নেতা মো. ইয়ামিন বলেন, একটা পক্ষের চাপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা হলে প্রচার-প্রচারণার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে না। প্রার্থীরা তাদের ম্যানিফেস্টো শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার সুযোগও বঞ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, শীতকালীন ছুটি পেছানোর কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীরা ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরলে জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় হবে।
ব্রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. শাহজামান বলেন, তপশিলের মধ্যে যতগুলো স্লট আছে সেখানে যতটুকু যৌক্তিক সময় নেওয়া প্রয়োজন, ততটুকুই নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমার মনে হয় সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতকালীন অবকাশ রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে উপাচার্যের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। চিঠিতে শীতকালীন ছুটি জানুয়ারি মাসে পেছানোর আবেদন জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্রাকসু নির্বাচনের কথা বিবেচনা করে শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে জানুয়ারি মাসে নিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন