জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ইফরাত জাহান বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একত্র হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমী চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানার সুযোগ পেত। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে সেভাবে কথা বলে না। ফলে সবার মাঝে থেকেও তারা নিজেদের একা মনে করে।’
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল’বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, সকাল ১০টায় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ‘মানসিক স্বাস্থ্য সার্বজনীন মানবাধিকার’ প্রতিপাদ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ইফরাত জাহান আরও বলেন, ‘দেশে একসময় যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ছিল। তখন প্রতিটি পরিবারে অনেক বেশি সদস্য থাকায় বাচ্চাদের কথা বলার মানুষের অভাব হতো না। কিন্তু এখন আমরা একক পরিবারে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া এবং বাবা-মায়েরা কাজে ব্যস্ত থাকায় বাচ্চারা একাকী বোধ করে। একই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে কথা না বলে ভার্চুয়াল জগতে ব্যস্ত থাকে। ফলে পাশে বসে থাকা একটা মানুষও তাদের অপরিচিত থেকে যায়।’
এসব সমস্যা নিরসনের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভার্চুয়াল জগত কখনো সামনা-সামনি কথা বলার বিকল্প হতে পারে না। আমাদের আশপাশের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। একে অপরকে জানতে হবে। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পরিবার-পরিজন এবং সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটতে পারে।’
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ অব্যাহতভাবে সহ্য করার চেয়ে তা নিয়ে অপরজনের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। এতে পরিস্থিতি মোকাবিলার পথ তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।’
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ সুস্থ থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।’
সেমিনারে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান ও শিক্ষার্থী কল্যাণ এবং পরামর্শদান কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক আফসানা হক প্রমুখ।
এ ছাড়া সেমিনারের টেকনিক্যাল সেশনে মনোবিজ্ঞানী শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জীও বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন