জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত বন উজাড়, জানেন না প্রশাসন!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিনব প্রতিবাদ। ছবি : কালবেলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিনব প্রতিবাদ। ছবি : কালবেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) নতুন ভবন নির্মাণের জন্য রাতের আঁধারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে গাছ কাটার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে গাছ কাটার প্রতিবাদে গাছে কাফন পরিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, বুধবার (১ নভেম্বর) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পাশে সুন্দরবন নামক স্থানে গাছগুলো কাটা হয়েছে। পরে গাছগুলোর ডালপালা ফেলে রেখে প্রধান অংশ ট্রাকে তুলে অন্যত্রে নেওয়া হয়েছে। গাছগুলো কোথায় নিয়ে গেছে, তা জানা যায়নি। তবে ট্রাকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেট দিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়। এ সময় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দুজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

গাছসহ ট্রাকটি ক্যাম্পাসের বাইরে বের হওয়ার বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হল গেটের দায়িত্বরত আনসার সদস্য মো. সাবিয়ার রহমান বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গাছসহ ট্রাকটি বের হয়ে যায়। ট্রাকের সঙ্গে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ ও পলাশ সাহা ছিলেন।

তবে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, আমরা সকালে ব্যক্তিগত কাজে ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার উদ্দেশে বের হই। ঘটনাচক্রে যখন মীর মশাররফ হোসেন হলের গেইট দিয়ে বের হতে যাই, তখন গাছের ট্রাকটিও গেট দিয়ে বের হচ্ছিল। তবে গাছ কাটা এবং সেগুলো বাইরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই।

নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা হলে সেসব গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে গাছ কাটার পর কয়েক ঘণ্টা পার হলেও কাটা গাছগুলো এস্টেট কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে এস্টেট কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার আবদুর রহমান বাবুল বলেন, নিরাপত্তা শাখার এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছি সেখানে গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। এছাড়া কাটা গাছগুলো আমাদের এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। গাছগুলো কোথায় আছে, তা জানি না।

এদিকে গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তখন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক ভেঙে সেখানে বৃক্ষরোপণ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দেড়টার দিকে যেখানে গাছ কাটা হয়েছে সেখানে নতুন কয়েকটি গাছ লাগিয়ে দেন আরেকদল শিক্ষার্থী। এরপর গাছে কাফন পরিয়ে সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন জাহাঙ্গীরনগরে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী অর্মত্য রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। তার প্রেক্ষিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়নের কাজও শুরু হয়েছে। অথচ সেটার অপেক্ষা না করে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন নামক স্থানে ইলেক্ট্রিক মেশিন দিয়ে অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। গাছের ছোট ছোট ডালপালা পড়ে আছে তবে গাছগুলোর প্রধান অংশ সেখানে নেই। গাছের গুড়িগুলোতে লাল রঙ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক ভেঙে সেখানে ‘গাছ কাটলে খবর আছে’ লেখা সেঁটে দিয়েছেন তারা।

ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওই স্থানে ভবন নির্মাণের জন্য সাবেক উপাচার্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টেন্ডার হয়েছে। যারা কাজ পেয়েছেন তারা গাছগুলো কেটেছে। গাছগুলো এস্টেট অফিসকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গাছগুলো ক্যাম্পাসেই থাকার কথা। কোথায় রাখা আছে, তা জানি না। তবে জেনে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব।

তবে গাছ কাটার বিষয়টি জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে গাছ কাটার বিষয়টি আমরা জানি না।

গাছ কাটার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম কালবেলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেশ কয়েকবছর আগে ভবন নির্মাণের জন্য তাদেরকে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে গাছ কাটার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এমনকি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকেও কিছু জানানো হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগের হামলা ও ভাঙচুর

রয়টার্সের এক্সক্লুসিভ / চীনের সঙ্গে ভারতের পানিযুদ্ধের আশঙ্কা

হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে আদালতে তৌহিদ আফ্রিদি

ফোন নম্বর ছাড়াই মেসেজ-কল নিয়ে আসছে ইলন মাস্কের নতুন অ্যাপ

রোহিঙ্গাদের জন্য এর বেশি করার সুযোগ বাংলাদেশের নেই : ড. ইউনূস

মাঠ থেকে মুখবাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আপস করব না : ফজলুর রহমান

কিউবা মিচেল-তপুদের দায়িত্বে ভ্যালেন্সিয়ার সহকারী কোচ

মা হচ্ছেন পরিণীতি চোপড়া, আসছে নতুন অতিথি

১৬ বছর আগে স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

১০

কলিজার টুকরা দিয়েও বাঁচানো গেল না স্বামীকে, মারা গেলেন নিজেও

১১

৬ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

১২

গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

ফজলুর রহমানের বাসার সামনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, সেনা মোতায়েন

১৪

কথা রাখেনি প্রেমিকা, অভিমানে গলায় ছুরি চালালেন হাবিবুর 

১৫

তীর্থযাত্রী বহনকারী ট্রলিতে ট্রাকের ধাক্কায় শিশুসহ নিহত ৮

১৬

বাংলাদেশ সফর ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে: ইসহাক দার

১৭

লুট হওয়া ২৫ লাখ ঘনফুট সাদা পাথর উদ্ধার

১৮

ক্ষমা চেয়ে আবেদন উমামা ফাতেমার

১৯

যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনি লো ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন

২০
X