কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুবিতে ‘তিন অনিয়মের দায়’ উপাচার্যের ওপর চাপালেন ট্রেজারার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লোগো। গ্রাফিক্স : কালবেলা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লোগো। গ্রাফিক্স : কালবেলা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকদের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচিত তিন অনিয়মে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনকে দোষারোপ করলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান।

গত ৩১ জানুয়ারি ‘সার্ভিস রুলস, একাডেমিক রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন’ (পরীক্ষা, ছুটি এবং আপগ্রেডেশন বিধি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। এতে রিসোর্স পারসন হিসেবে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ।

তবে প্রশিক্ষণে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর কোনো বিশেষজ্ঞকে না রেখে কোষাধ্যক্ষকে রিসোর্স পারসন হিসেবে কেনো রাখা হয়েছে? অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা এমন প্রশ্ন তোলেন। এসময় শিক্ষকরা কোষাধ্যক্ষের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচিত বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের প্রাপ্ত ভাতা থেকে কোনো প্রকার নীতিমালা ছাড়াই ভাইস চ্যান্সেলরের নামে বৃত্তি প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচে গেস্ট হাউস রাখা হলেও শিক্ষকদের বঞ্চনায় ডুবিয়ে সেটি উপাচার্যের দখলে নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-২০০৬ ও ইউজিসির আইন অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগে, পদোন্নতিতে বৈষম্য সৃষ্টির পাশাপাশি সঠিক নিয়মে আপগ্রেডেশন না দেওয়াসহ গুরুতর অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষকরা প্রশ্ন তোলেন। পরে এসব অনিয়মের দায় উপাচার্যের ওপর চাপান কোষাধ্যক্ষ।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, আমরা ট্রেজারারের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর পিএইচডি নথিভুক্তি, উপাচার্যের পছন্দের ব্যক্তিদের পদোন্নতি স্থায়ীকরণ এবং সব শর্তপূরণ হলেও ব্যক্তিগত আক্রোশে অন্য শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রদানে অযাচিত শর্তারোপের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বিব্রতবোধ করেন।

তিনি বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না। হায়ার অথরিটি আছে; বোর্ড আছে। উপাচার্য এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’ এভাবে তিনি আমাদের প্রশ্ন এড়িয়ে উপাচার্যের ওপর দায় চাপান। বস্তুত এসব অনিয়মের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান জানান, আমি কোষাধ্যক্ষের কাছে জানতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ম আছে, কিন্তু এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে কোনো আইনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? যোগ্যতা থাকার পরও কেনো প্রমোশন আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচে গেস্ট হাউস রাখা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষকদের বঞ্চনায় ডুবিয়ে উপাচার্য একাই সেটি কীভাবে দখল করতে পারেন? যে পদ্ধতিতে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে সেটার খাত নিয়েও কোষাধ্যক্ষকে প্রশ্ন করলে তিনি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। উল্টো শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এটির সম্পূর্ণ দায়ভার উপাচার্যকে চাপিয়ে দেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি উপাচার্য একাই সকল দুর্নীতির মূল হোতা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহযোগী অধ্যাপক বলেন, শিক্ষক পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের সময় তো Q1 এবং Q2 নীতিমালা ছিল না। কিন্তু এসব নিয়ে পদোন্নতির সময় আমাদের আটকে দিচ্ছে। এসব নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় তখন কোষাধ্যক্ষ বলেন, এসব বিষয়ে আমার হাতে থাকে না। এখানে হায়ার অথরিটি আছে। যাচাইবাছাই বোর্ড আছে তাদের ওপর নির্ভর করে।’ আবার উপাচার্য তার নিজের কাছে গেস্ট হাউসের চাবি রেখে দেওয়াতে আমাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এরপর তার অপছন্দের শিক্ষকদের পদোন্নতিতে নিয়মবহির্ভূত শর্তারোপ করছেন। শিক্ষকরা এসব প্রশ্নবাণে জর্জরতি করলে তখন কোষাধ্যক্ষ বিব্রত হয়ে বলেন, ‘এসব বিষয়ে উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।’

এদিকে শিক্ষকদের তোপের মুখে উপাচার্যের ওপর দায় চাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপাচার্যের ওপর দায় চাপানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য। শিক্ষক নিয়োগ এবং আপগ্রেডেশনের বিষয়টি হায়ার বোর্ডের বিষয়। সেখানে উপাচার্যসহ অন্যান্য বোর্ড মেম্বাররা সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে কাছের লোকদের সুযোগ দেওয়া কিংবা দূরের লোকদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি সম্পূর্ণ ওনাদের। আমি সেখানে ছিলামও না। কী হয়েছে জানিও না।

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস নিয়ে বিড়ম্বনা ও মেধাবৃত্তির বিষয়ে উপাচার্যের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে শিক্ষকদের কাছে কোষাধ্যক্ষের দেওয়া মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা সময় ভর্তি পরীক্ষার লভ্যাংশ থেকে শিক্ষকদের একটি অংশ দেওয়া হতো। যা পুরোপুরি প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু বর্তমানে সেই অর্থ দিয়ে মেধাবৃত্তি দেওয়ার বিষয়টি ‘নিয়ম মেনে করা হয়নি’ এই ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষকদের তখন বলেছি গেস্ট হাউস অব্যবস্থাপনার বিষয় নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলব।

তবে কোষাধ্যক্ষের দায় ছাপানোর বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দপ্তরে গেলে তিনি অন্যান্য সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও প্রতিবেদককে ব্যস্ততা দেখিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পরও কথা বলেন নাই।

এরপর উপাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

‘সবার উপরে ভাত’র কোটি ভিউজ উদযাপন

‘এক পায়ে পাড়া দিয়ে, আরেক পা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো’

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত ৪২ জনের নাম প্রকাশ

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের তৃতীয় হার

নির্বাচনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইলেন তারেক রহমান

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কত বছর লাগবে, জানালেন প্রেস সচিব

স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডারের ৬ কর্মকর্তা

চাকরি দিচ্ছে এসিআই, আবেদন করুন এখনই

১০

কালুখালী জংশনে থামবে বেনাপোল এক্সপ্রেস, স্থানীয়রা উচ্ছ্বসিত 

১১

হচ্ছে না ‘রাউডি রাঠোর ২’

১২

তামিমের বিয়ে নিয়ে বিভ্রান্তি, মজা করলেন শান্ত

১৩

টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে গোয়েন্দা নজরদারির গোমর ফাঁস

১৪

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামের উন্নয়নে কাজ করবে বাফুফে’

১৫

সাদাপাথর লুটপাটে জড়িতের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হবে : সিলেটের ডিসি 

১৬

প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দিলেন মেঘ

১৭

মোটরযানমুক্ত আধুনিক শহর, দেখেই চোখ জুড়ায় (ভিডিও)

১৮

জিলানীর শরীরে রয়ে যাওয়া ‘পিলেট’ অপসারণ করলেন বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিক

১৯

গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে : আখতার 

২০
X