ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘খেজুরের পরিবর্তে বরই খেতে বলা লোকদের খেজুর আসে সৌদি থেকে’

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনস্থ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল মানববন্ধন করে। ছবি : কালবেলা
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনস্থ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল মানববন্ধন করে। ছবি : কালবেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাদা দলের আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বলা হয়েছে, খেজুরের পরিবর্তে যেন আমরা বরই খাই। যারা দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে খেজুর খেতে না করে, তাদের খেজুর কিন্তু বাংলাদেশের নিউমার্কেট থেকে কেনা হয় না। তাদের খেজুর আসে সরাসরি সৌদি আরব থেকে।

রোববার (১০ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনস্থ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল আয়োজিত মানববন্ধনে এই বক্তব্য দেন তিনি।

মানববন্ধনে লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতিটা জিনিসের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, এটা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টের জায়গা। কিন্তু, আমরা দেখি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কীভাবে বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও মেহনতি মানুষদের তিরস্কার করা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। যেখানে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সাংঘাতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে এবং দেশের মানুষ যেখানে একটি ক্রান্তিলগ্ন অবস্থা পার করছে, সেখানে দেশের সরকার যেই থাকুক না কেন তাদের ভাবা উচিত, সাধারণ মানুষকে কীভাবে স্বস্তি দেওয়া যায়।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ তো ব্যাংক বিপর্যয়, ব্যাংক লুটপাট ও শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, এগুলো করতে যায় না। সাধারণ মানুষ চায় মৌলিক অধিকার, তারা চায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সহনীয় অবস্থা অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য তাদের আয় অনুযায়ী ভারসাম্যপূর্ণ কি না, সেটা তারা চায়। কিন্তু আমরা দেখছি, সেই জায়গায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে, সরকার তার দায়িত্বের জায়গা থেকে যেভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছে সেটি অত্যন্ত হতাশাজনক এবং নিন্দনীয়। আমরা এর আগে দেখেছি, বেগুনের দাম যখন বৃদ্ধি পেয়েছে তখন বেগুন না খেয়ে না খেয়ে জনগণকে কুমড়ানি খেতে বলা হয়েছে। আমার মনে হয়, এই জায়গাগুলোতে একটু ভাবা দরকার, এই সমস্ত দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আমরা যা ইচ্ছা তাই বলতে পারি কি না।

তিনি আরও বলেন, সামনে রমজান মাস। রমজানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইটেম হলো খেজুর। মানুষ যত কষ্টেই থাকুক না কেন, রমজানে এই খেজুরটা গ্রহণ করতেই হয়। এটা ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটা একটা সুন্নত। কিন্তু, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বলা হয়েছে, খেজুরের পরিবর্তে যেন আমরা বরই খাই। যারা দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে খেজুর খেতে না করে, তাদের খেজুর কিন্তু বাংলাদেশের নিউমার্কেট থেকে কেনা হয় না। তাদের খেজুর আসে সরাসরি সৌদি আরব থেকে। এমনও হতে পারে, গাছ থেকে পেড়ে সরাসরি বাংলাদেশে তাদের এসি রুমগুলোতে নিয়ে আসা হয়। আমরা সেই চাটুকারদের কথামতো যদি কোনো কিছুর ব্যবহার কমাতে চাই, তাহলে তা কতটুকু পরিমাণে কমাব? চালের দাম যদি বেড়ে যায়, তাহলে না হয় আলু খেলাম, কিন্তু আলুর দামও যখন বেড়ে যায় তখন আলুর পরিবর্তে কী খাব? সেটিও সরকারকে ভাবা উচিত।

জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সিন্ডিকেট জড়িত দাবি করে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এবং যাদের কারণে দাম বাড়ে তারা একটি বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সেই ব্যবসায়ীরাই সংসদে বক্তৃতা দেয়, যাদের বেগমপাড়ায় বাড়ি আছে। সুতরাং, এসি রুমে কথাবার্তা বলায় তাদের ট্যাক্স দিতে হয় না। কিন্তু, এই প্রভাবটা পড়ে আমরা যারা ট্যাক্স পে করি, তাদের ওপর। সুতরাং সরকারকে বুঝতে হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমাতে হলে মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে হলে এই শ্রেণিভেদ ভেঙে দিতে হবে। সরকারের তো সেই সাহস নেই। কারণ সিন্ডিকেটই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভোক্তাপর্যায়ে মোট ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। পাইকারি পর্যায়ে মোট ১২ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার জন্য আগে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হতো। কিন্তু, বর্তমান সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সেই ক্ষমতাকে কেড়ে নিয়ে সরকার নিজেদের ইচ্ছেমতো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে তিনি বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ ছিল। সেই শ্রীলঙ্কা সবকিছুর সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের মূল্যস্ফীতির পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে একটু খারাপ অবস্থায় আছে। সেখানেও যদি আমরা দেখি, পাকিস্তান গত এক বছরে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে যখন গত বছর ১১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল, তখন বাংলাদেশ সরকার বলেছিল যে, ভারতের থেকে আমরা ভালো আছি। আজকে ভারত যখন ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, সেখানে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৯.৬৭ থেকে ৯.৮৬ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা এটা থেকে উত্তরণ চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মহিউদ্দনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্য অনুষদ সাদা দলের আহ্বায়ক ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম জাহিদ এবং বায়োলজিকাল সায়েন্সেস অনুষদ সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইয়েদ তানভীর রহমান।

এ ছাড়া মানববন্ধনে সংগঠনটির বিভিন্ন অনুষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মৌসুমি বায়ুসহ আগামী ৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

এবার উপদেষ্টাদের নিয়ে মুখ খুললেন সামান্তা শারমিন

ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক

ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়লেন স্মৃতি মান্ধানা!

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১০

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে : মুনতাসির

১১

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

১২

ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

১৩

ধানের শীষের বিজয় মানেই জনগণের মুক্তি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

১৪

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৫

বাবর আজমকে নিয়ে ধারাভাষ্যে রমিজ রাজার তির্যক মন্তব্য

১৬

‘সঠিক ও মানসম্পন্ন সংবাদ উপস্থাপনে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে’

১৭

আন্দরকিল্লা মসজিদ আইকনিক করতে ব্যয় ৩০০ কোটি

১৮

মেসির চেয়েও ধনী শুধু দুইজন ক্রীড়াবিদ!

১৯

প্রবাসীর ছেলেকে দাদা-দাদির কবরের পাশে ঠাঁই দিল না চাচারা

২০
X