জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শরীয়তপুরের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস এইচএসসি পরীক্ষার্থী। গত ৬ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর হাসপাতালেই পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। জান্নাতুল শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত বুধবার সকালে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালের শয্যার পাশে বসে সন্তান নিয়ে তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা দেন। সদর উপজেলা প্রশাসন তার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। মেট্রো ক্লিনিকের গাইনি ওয়ার্ডের একটি কক্ষে এ পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মূলত জান্নাতুল ফেরদৌসের পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল শহরের সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ।
এ বিষয়ে জান্নাতুল এর ননদ মাহিন খান বলেন, ‘জান্নাতুলকে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের পুরো পরিবার কৃতজ্ঞ। আমার ভাবির জীবনে এ ঘটনাটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশাভোগ এলাকার সাঈদ খানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে জান্নাতুলের বিয়ে হয়। এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেই তার প্রত্যাশিত প্রসবের দিনক্ষণ (ইডিডি) ছিল। গত মঙ্গলবার ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর জান্নাতুলের প্রসববেদনা ওঠে। রাতে তাকে শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার সকালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জান্নাতুল একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এদিন তার কোনো পরীক্ষা ছিল না। গতকাল ছিল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা।
পরিবারের সদস্যরা আরও জানায়, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ঠিক কীভাবে পরীক্ষায় দেবেন, তা নিয়ে সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তখন বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে জানানো হয়। অতঃপর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ হাসপাতালের শয্যায় পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ প্রদান করে।
মেট্রো ক্লিনিকের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জয়ন্ত কুমার কর্মকার জানান, ‘নবজাত কন্যা ও জান্নাতুল সুস্থ আছেন। তারা আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
শরীয়তপুর সদরের ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র কালবেলাকে বলেন, ‘এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান প্রসব করার পরেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবেদন করেন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালে ওই পরীক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার্থী যে কয়দিন হাসপাতালে থাকবেন, সেখান থেকেই সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তার পরীক্ষার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি।’
মন্তব্য করুন