প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকার পরও অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মো. জাকির হোসেন এবং উপ-রেজিস্ট্রার আবু হানিফাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হয়। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের আলোকে ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছিল।
চূড়ান্ত বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রের নির্দেশনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারি নিরীক্ষা আপত্তিসমূহের প্রেক্ষিতে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জাকির হোসেন ও উপ-রেজিস্ট্রার মো. আবু হানিফার কাছে জবাব চাওয়া হয়। তা যাচাই-বাছাইয়ের আলোকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৩১তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের নিয়োগ ও নিয়োগ সংক্রান্ত সকল আদেশ, প্রক্রিয়া, কার্যক্রম আইনত অবৈধ হওয়ায় জাকির হোসেন ও আবু হানিফার অবৈধ নিয়োগ বাতিল করা হলো। এ আদেশ গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত থেকে জানা যায়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, আইন ২০১৩ এ উপাচার্যের অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতার বিষয়ে উল্লেখ নেই। কিন্তু এরপরও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মো. জাকির হোসেন অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের পূর্বানুমোদনের কোনো তথ্য বা প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া তার শিক্ষাজীবনে একটি তৃতীয় বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট পদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই। এতেও আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।
একইভাবে উপ-রেজিস্ট্রার আবু হানিফার নিয়োগকালীন পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তার সে অভিজ্ঞতা নেই। এছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের কোনো কাগজপত্র এবং আগের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। তাই তার নিয়োগটিও বৈধ নয় বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, জাকির হোসেন ও আবু হানিফার নিয়োগ যে অবৈধ সেটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। সেই আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত জুন মাসেই চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সিন্ডিকেটের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা থাকায় গত ৪ নভেম্বর তাদের সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
একইসঙ্গে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না- এ মর্মে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়। পাশাপাশি তাদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শোকজের জবাব যাচাই-বাছাই এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিন্ডিকেট সভায় তাদের আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, তাদের বিষয়ে ইউজিসি তদন্ত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরাও যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন