এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিক্ষার কোনো বয়স নেই- এ কথাটিই আবারও প্রমাণ করলেন ৩ নারী জনপ্রতিনিধি। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এবং পারিবারিক অসচ্ছলতায় পড়াশোনা থমকে যায় তাদের। তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাদের। তবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর নানাভাবে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তারা।
তাই, দীর্ঘদিন পর স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অনুপ্রেরণায় আবারও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বয়সকে তুচ্ছ করে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণিতে। আর এ বছর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তারা ৩ জনই।
এই বয়সে এসে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩ নারী জনপ্রতিনিধি পরীক্ষার্থীদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায়। তারা বাগাতিপাড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মুর্শিদা বেগম, পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শিলা খাতুন এবং একই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য শাহানাজ পারভীন।
তারা সবাই বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের কারিগরি শাখার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শিলা খাতুন কারিগরি শাখার ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন ট্রেডে এবং অপর দুইজন ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডের পরীক্ষার্থী।
এই ৩ নারী জনপ্রতিনিধি জানান, পারিবারিক অসচ্ছলতায় অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তাদের। পরে সংসার জীবন শুরু। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি। তবে অনেক পরে হলেও পরিবারের সমর্থনে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পাড়ায় খুশি তারা। এছাড়াও তারা মনে করেন জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ৩ নারী ইউপি সদস্যের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। বয়স যে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হতে পারে না এই তিন জনপ্রতিনিধিকে তার দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
স্থানীয় শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। অদম্য এ ধরনের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। এই ৩ জনপ্রতিনিধির এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দেখে সাধারণ মানুষ লেখাপড়ায় আরও অনুপ্রাণিত হবে বলেও মনে করেন তারা।
মন্তব্য করুন