বর্তমানে সবাই ফিট থাকতে চান। ফিট থাকতে কতকিছুই না করতে হয়। বিশেষ করে শকর্রা ও তেলযুক্ত খাবার বাদ দিতে হয়। কেউ তো আবার সম্পূর্ণ তেল ছাড়া রান্না করতেও অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। মাত্র দুই সপ্তাহ তেল ছাড়া খাবার খেলেই শরীরে দেখা দিতে পারে কিছু বিস্ময়কর পরিবর্তন। তেল বা চর্বি শুধু ক্যালোরির উৎসই নয়, এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে পুষ্টিবিদ কণিকা মালহোত্রা মতে, টানা দুই সপ্তাহ একেবারে তেল ছাড়া খাবার খেলে শরীরের হজম ও বিপাকক্রিয়ায় সাময়িক কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। ফ্যাট না থাকায় ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরে ঠিকভাবে শোষিত হয় না। এর ফলে পুষ্টিহীনতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক তেল ছাড়া খাবারে শরীরে যে ধরনের প্রভাব পড়ে:
হজম ও ওজনের ওপর প্রভাব
তেল বাদ দিলে সাময়িকভাবে ক্যালোরি গ্রহণ কমে যায়। ফলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে। তবে এর পাশাপাশি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যার কারণে খাবারের প্রতি আগ্রহ ও খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
ভিটামিন শোষণে সমস্যা
তেল ছাড়া খাবার গ্রহণ করলে মাইসেল গঠনে ব্যাঘাত ঘটে। যা ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিনের শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং হাড়ের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য
ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতির কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, এমনকি চুলকানির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
শক্তির ঘাটতি
চর্বি হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস। যা ধীরে ধীরে শরীরে শক্তি জোগায়। তাই খাদ্যতালিকায় চর্বির অনুপস্থিতি শক্তির ঘাটতি তৈরি করতে পারে, যার ফলে শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
মানসিক প্রভাব
ফ্যাটের ঘাটতি মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যার ফলে খিটখিটে মেজাজ বা মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেসব খাবারে প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়:
চর্বিযুক্ত মাছ : স্যামন, সারডিন, ম্যাকারেল প্রভৃতি।
বীজ : ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড।
বাদাম : আখরোটসহ অন্যান্য বাদাম।
ফর্টিফায়েড খাবার : ওমেগা-৩ যুক্ত ডিম, দুধ, প্ল্যান্ট-বেসড মিল্ক ইত্যাদি।
স্বল্প সময়ের জন্য তেল বাদ দিয়ে ডিটক্স বা ওজন কমানোর চেষ্টা ক্ষতিকর না হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস শরীরের পুষ্টির ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই একেবারে তেল বাদ দেওয়ার পরিবর্তে, পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর পরিমাণে ভালো মানের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।
মন্তব্য করুন