বর্তমান সময়ে অনেকেই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। কখনও মানসিক চাপ, কখনও ভুল খাওয়াদাওয়া, আবার কখনও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার—সব মিলিয়ে চুল পড়া যেন নিত্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শুধু বাইরের যত্নে ঘাটতি নয়, অনেক সময় চুল পড়া শরীরের ভেতরের কোনও বড় রোগের ইঙ্গিতও হতে পারে।
চলুন জেনে নিই, কোন কোন অসুখের কারণে চুল বেশি পরতে পারে:
১. পিসিওডি (PCOD / PCOS)
অনেক নারীরই এই হরমোনজনিত সমস্যাটি হয়। এতে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে চুল প্রচুর পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, চুল রুক্ষ আর প্রাণহীনও হয়ে পড়ে। এই সমস্যা নিয়মিত চিকিৎসা আর লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
২. থাইরয়েডের সমস্যা
থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে শরীর কিছু প্রয়োজনীয় খনিজ (যেমন আয়রন ও ক্যালশিয়াম) ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। যার প্রভাব পড়ে চুলে। হাইপোথাইরয়েড (থাইরয়েড কম) এবং হাইপারথাইরয়েড (থাইরয়েড বেশি)—দুটো ক্ষেত্রেই চুল ঝরার প্রবণতা দেখা যায়।
৩. অ্যালোপেসিয়া
এটা একধরনের অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজেই চুলের ফলিকলকে আক্রমণ করে। এর ফলে মাথায় গোলাকার টাকের মতো দাগ দেখা যায়। এমনকি ভ্রু ও দাড়ির চুলও ঝরে যেতে পারে।
৪. এগজিমা ও সোরিয়াসিস
এই ধরনের ত্বকের রোগে মাথার ত্বকে র্যাশ, চুলকানি এবং লালচে ছোপ হতে পারে। এর প্রভাবেও চুলের ঘনত্ব কমে যায়। মাথার ত্বক যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে চুলও ভালো থাকবে না—এটা মনে রাখা জরুরি।
৫. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
চুল পড়ার অন্যতম বড় কারণ হলো মানসিক চাপ। অতিরিক্ত টেনশন, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা চুলের স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই মন ভালো রাখা আর স্ট্রেস কমানোও চুলের যত্নেরই অংশ।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হলে চুল পড়তে পারে। যেমন:
আয়রন – অক্সিজেন সঠিকভাবে শরীরে পৌঁছাতে সাহায্য করে
জিংক – কোষ মেরামত ও চুলের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে
ফ্যাটি অ্যাসিড – চুলের জন্য প্রাকৃতিক তেল সরবরাহ করে
ভিটামিন বি৩ – চুলকে মজবুত ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে
সুস্থ চুল চাইলে সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি।
চুল পড়া শুরু হলেই তা শুধু শ্যাম্পু বা তেল বদলে ঠিক হবে—এমন নয়। কখনও কখনও এটা শরীরের ভেতরে থাকা সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই বেশি চুল পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
মন্তব্য করুন