

ডিজিটাল যুগে মানুষের প্রথম ডাক্তার এখন আর হাসপাতালের চিকিৎসক নন, বরং গুগল। সামান্য মাথাব্যথা থেকে শুরু করে বুক ধড়ফড়ানি, হজমের সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের লক্ষণ—সবকিছু নিয়েই মানুষ প্রথমে ছুটে যান সার্চ ইঞ্জিনে।
বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে কিডনি স্টোন—এমন নানা রোগ প্রতিটি পরিবারেই এখন প্রায় নিয়মিত উদ্বেগের কারণ। ফলে স্বভাবতই গুগলে সার্চ করা স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত প্রশ্নও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
২০২৫ জুড়ে ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি কোন কোন স্বাস্থ্য প্রশ্ন গুগলে খুঁজেছেন? কেন এই প্রশ্নগুলো মানুষের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? এবং প্রতিটির সরল, ঝটপট উত্তর কী—তা নিয়ে এই বিশেষ ফিচার।
এখানে দেওয়া হলো সেই সর্বাধিক গুগল করা ১৫টি স্বাস্থ্য প্রশ্ন এবং তাদের সংক্ষিপ্ত, সহজ ও প্রমাণভিত্তিক ব্যাখ্যা—
১. স্বাভাবিক সুগারের মাত্রা কত?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ৭০-১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার থাকা উচিত। খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর এই মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
২. উচ্চ রক্তচাপ কী?
যখন ধমনীর দেওয়ালে রক্তের চাপ ক্রমাগত খুব বেশি থাকে, তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। ১৩০/৮০ mmHg বা তার বেশি হলেই উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. রক্তচাপ কমানোর সেরা উপায় কী?
ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সোডিয়াম কমিয়ে হার্টবান্ধব ডায়েট মেনে চলুন। নিয়মিত শরীরচর্চা, ওজন কমানো, ধূমপান ত্যাগ করা এবং মদ্যপান সীমিত করা জরুরি।
৪. কোলেস্টেরল কীভাবে কমাব?
কোলেস্টেরল কমাতে ফল, সবজি ও হোল গ্রেনযুক্ত খাবার খান এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়িয়ে চলুন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের শরীরচর্চা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং মানসিক চাপ কমান।
৫. ডায়াবেটিস কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায় না। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম, সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
৬. লিভারবান্ধব ডায়েট কেমন?
এই ডায়েটে ফল, সবজি, হোল গ্রেন, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি, নুন এবং অ্যালকোহল সীমিত করা উচিত। এটি লিভারের ডিটক্সিফিকেশন এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৭. বাড়িতে A1c মাত্রা কীভাবে পরীক্ষা করব?
যদিও বাড়িতে রক্ত পরীক্ষা করার কিট পাওয়া যায়, তবে সঠিক বিশ্লেষণের জন্য সার্টিফাইড ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল।
৮. পেট ব্যথার কারণ কী?
গ্যাস, হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, খাদ্যে অ্যালার্জি বা পেটের সংক্রমণ (ফুড পয়জনিং) এর সাধারণ কারণ। তবে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বা গলস্টোনের মতো গুরুতর সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে।
৯. ডায়রিয়ার কারণ কী?
সাধারণত দূষিত খাবার বা জল থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবী দ্বারা সংক্রমণই প্রধান কারণ। কিছু ওষুধ, খেতে ইচ্ছে না করা বা আইবিএস-এর মতো হজমের সমস্যাও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
১০. কীভাবে খুশকি থেকে মুক্তি পাব?
পাইরিথিওন জিঙ্ক বা স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। গরম জল এড়িয়ে চলুন। টি ট্রি অয়েল বা নারকেল তেলের মতো ঘরোয়া প্রতিকারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
১১. কেন এত ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত লাগে?
অপর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ প্রধান কারণ। এছাড়া খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভাব, বা অ্যানিমিয়া, থাইরয়েড, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো অন্তর্নিহিত রোগের কারণেও ক্লান্তি আসতে পারে।
১২. পেট ফাঁপা কমানোর উপায় কী?
গরম জল পান করা, হাঁটা, পুদিনা বা আদা চা পান করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে খাওয়া, চুইংগাম ও কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চললে চলা। পেটে হিট প্যাড ব্যবহার করলেও উপকার মেলে।
১৩. ক্যানসারের লক্ষণ কী কী?
কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, হঠাৎ ওজন হ্রাস, শরীরে মাংসপিণ্ড বা ফোলাভাব, ত্বকের পরিবর্তন, মল/মূত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং অস্বাভাবিক রক্তপাত। কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১৪. কিডনি স্টোন হওয়ার কারণ কী?
কিডনি স্টোন মূলত প্রস্রাবে খনিজ পদার্থের ঘনত্বের কারণে শক্ত স্ফটিক তৈরি হওয়ার ফল। ডিহাইড্রেশন, উচ্চ সোডিয়াম বা চিনিযুক্ত খাবার, কিছু চিকিৎসা পরিস্থিতি এবং স্থূলতা এর ঝুঁকি বাড়ায়।
১৫. হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী?
বুকে চাপ, ব্যথা বা আঁটসাঁট লাগার মতো অস্বস্তি হল প্রধান লক্ষণ, যা কাঁধ, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে, যেমন: অস্বাভাবিক ক্লান্তি, পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা।
সূত্র : দ্য ওয়াল
মন্তব্য করুন