

নিয়মবহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যুত চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুনর্বহাল এবং শহীদ মনসুর আলী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও ট্রেজারার তমাল মনসুর, তার মা লায়লা আরজুমান্দ বানু, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরা এলাকায় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ট্রাস্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। তাদের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের ফলে নিয়মবহির্ভূতভাবে বহু চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অন্যায়।
মানববন্ধনে আরও অভিযোগ করা হয়, গত দেড় বছর ধরে লায়লা আরজুমান্দ বানু ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে পলাতক। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে জুম মিটিং ও ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ট্রেজারার তমাল মনসুর কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরিচালকের যোগসাজশে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একাধিক শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বরখাস্ত করে। একই সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। দুদক ও ফৌজদারি মামলা চলমান থাকা এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যৌথ স্বাক্ষরে ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করছেন। এতে অবৈধ চেয়ারম্যান ও ট্রেজারারের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা রয়েছে।
বক্তারা বলেন, ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও পলাতক তমাল মনসুর এবং তার মা লায়লা আরজুমান্দ বানু বিদেশে অবস্থান করেই ডিজিটাল স্বাক্ষর ও অনলাইন সভার মাধ্যমে কলেজ ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন। এর ফলে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানটি ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
তারা বলেন, জুলাই ছাত্রজনতার অভ্যূত্থানের সময়ে ট্রাস্টের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান ও ট্রেজারার তমাল মনসুর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হিসেবে আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। আমরা জাতীয়তবাদী চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা যারা আহতদের চিকিৎসা দিয়েছিলাম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যুত করে। অবিলম্বে আমাদের সব চিকিৎসক, শিক্ষক, কমকর্ত ও কর্মচারীদের চাকরিতে পুর্নবহাল করতে হবে। ট্রাস্টের অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত চেয়ারম্যান ও ট্রেজারার পলাতক তমাল মনসুর এবং তার মা লায়লা আরজুমান্দ বানুকে অপসারণ। বিধিবহির্ভূতভাবে মেডিকেল কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও পরিচালকের অপসারণ ও অবৈধভাবে পরিচালিত সকল ব্যাংক হিসাব বন্ধ এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. রেজাউল হক বলেন, জুলাই ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিস্ট ট্রাস্টি তমাল মনসুর ও তার মা লায়লা আরজুমান্দ বানু কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার কারণে ৫ আগস্টের পর জাতীয়তাবাদী চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকরিচ্যূত করা হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আজ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরির্দশনে এসেছে। এজন্য এখানে কিছু সংখ্যক মানুষকে ভাড়াটে রোগী দেখানো হয়েছে। এরা কেউ রোগী নন। তাদের জনপ্রতি ১ হাজার করে টাকা দিয়ে আনা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চাকরিচ্যুত ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মেরিনা সুলতানা, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. দীনা এ এস হোসাইন, মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল ফারুক, সার্জারী বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. রেজাউল হক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ডা. আনজিরা ফারাহ লিনজা, মেডিসিন ইউনিট-১ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রায়হান আহম্মেদ এবং অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ফারহানা কাসেমী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন