

সাবেক ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কমিশনারসহ পাঁচজনের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে নির্দিষ্ট মতামত দমন করতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই চরমপন্থি কর্মী ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত এনজিওগুলো বিদেশি সরকারের পক্ষে সেন্সরশিপ জোরদার করেছে, যা সরাসরি মার্কিন বক্তা ও মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করেছে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক শীর্ষ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক থিয়েরি ব্রেতোঁ। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাকে ইইউর ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্টের (ডিএসএ) ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই আইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি আরোপ করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রক্ষণশীল রাজনীতিক ও গোষ্ঠীর দাবি, ডিএসএ মূলত ডানপন্থি মতামত দমনের একটি হাতিয়ার। যদিও ব্রাসেলস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
থিয়েরি ব্রেতোঁ এর আগেও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও এক্সের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে ইইউর নিয়ম মানা নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছিলেন। সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন নীল টিক ব্যবস্থাকে ‘বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে এক্সকে ১২০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে, যা ডিএসএ আইনের অধীনে প্রথম জরিমানা। এর জবাবে এক্স প্ল্যাটফর্মে কমিশনের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ব্রেতোঁ এক্সে লিখেছেন, আমাদের মার্কিন বন্ধুদের উদ্দেশে বলছি—সেন্সরশিপ আসলে যেখানে ভাবছেন, সেখানে নেই।
ভিসা বাতিল হওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক গ্লোবাল ডিসইনফরমেশন ইনডেক্সের (জিডিআই) প্রধান ক্লেয়ার মেলফোর্ড। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমন্ত্রী সারা বি রজার্স অভিযোগ করেন, জিডিআই মার্কিন করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করে ‘মার্কিন মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমকে সেন্সর ও কালো তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহ দিয়েছে’।
তবে জিডিআইর এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, আজ ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কর্তৃত্ববাদী আক্রমণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে চরম সেন্সরশিপ।
এ ছাড়া অনলাইন ঘৃণা ও ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইটের (সিসিডিএইচ) প্রধান ইমরান আহমেদের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রজার্স তাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ দমনের প্রচেষ্টার ‘মূল সহযোগী’ বলে উল্লেখ করেন।
এ তালিকায় আরও রয়েছেন জার্মান সংগঠন হেটএইডের দুই প্রধান নির্বাহী আন্না-লেনা ফন হোডেনবার্গ ও জোসেফিন বালোঁ। তারা বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, এটি এমন এক সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপ, যারা ক্রমেই আইনের শাসন উপেক্ষা করছে এবং সমালোচকদের চুপ করাতে চায়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, বিশ্বব্যাপী ‘সেন্সরশিপ-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের এজেন্টদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে তারা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি আরও যোগ করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতি মার্কিন সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন মেনে নেয় না। বিদেশি সেন্সরদের মাধ্যমে মার্কিন মতপ্রকাশে হস্তক্ষেপও এর ব্যতিক্রম নয়।
মন্তব্য করুন