হাইপারট্রপিক অবসট্রাকটিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি হার্টের একটি বংশগত ও জন্মগত রোগ। হার্টের চারটি চেম্বার রয়েছে এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চেম্বার হল বাম নিলয়, এই রোগে এই বাম নিলয়ের মাংসপেশি মোটা হয়ে যায়। মূলত ২ নিলয়ের মাঝে অবস্থিত পার্টিশন এবং এই মোটা মাংসপেশি শরীরে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, এবং মারাত্মক অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন তৈরি করে।
সাধারণত এই রোগীরা হাঁটতে গেলে হাঁপিয়ে যায় অথবা হাঁটতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়। এ ছাড়া কিছু কিছু রোগী হাঁটতে গেলে অথবা দৌড়াতে গেলে অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে। মারাত্মক অনিয়মিত হৃদ স্পন্দনের কারণে মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যায়।
এই ধরনের রোগ নির্ণয়ের জন্য ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফিই যথেষ্ট, ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে সহজেই এই মাংসপেশি মোটা হওয়ার আলামত পাওয়া যায়। মাংসপেশি মোটা হওয়ায় হার্টের প্রেসার বেড়ে যায়, যা সহজেই আমরা ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে ধরতে পারি। হাইপারট্রপিক অবসট্রাকটিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগীর দুই ধরনের চিকিৎসা আছে, একটি বুক কেটে আরেকটি বুক না কেটে। বুক কেটে, হার্ট কেটে ওই মাংসপেশিকে কেটে নেওয়া হয়। এই বুক কেটে এই ধরনের চিকিৎসা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশে এই রোগের চিকিৎসা খুবই অপ্রতুল।
এ ছাড়া বুক না কেটে ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতিতে এই রোগের চিকিৎসা করা যায়, এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্যাথেটার সিস্টেমের মাধ্যমে হার্টে শতভাগ অ্যালকোহল দিয়ে ওই মোটা মাংসপেশিতে নিয়ন্ত্রিত হার্ট অ্যাটাক ঘটানো হয়। এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটিয়ে ওই মোটা মাংসপেশিকে পাতলা করা হয়, মাংসপেশি পাতলা হয়ে গেলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং রোগীর সমস্যা কমে যায়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার এর নেতৃত্বে একটি টিম এই সূক্ষ্ম, জটিল ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতিতে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সাফল্যজনকভাবে, বাংলাদেশে ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই পদ্ধতিতে সরকারি হাসপাতালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্বল্প খরচে এই পদ্ধতিতে অপারেশন করে যাচ্ছেন।
এ পর্যন্ত ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার মোট দশজন রোগীর শরীরে এই সাফল্যজনকভাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন এবং প্রতিটি রোগী ভালো আছেন।
এ রোগটি প্রতি ৫০০ জনে একজনের সাধারণত হয়, তাই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী এই ধরনের রোগে ভুগছেন। এই রোগীগুলো ঠিকমতো জানে না কোথায় কার কাছে সাফল্যভাবে এই চিকিৎসা নিতে হবে।
তারা দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে ব্যর্থ হয়ে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার ইতিপূর্বে বুক না কেটে টিএভিআর পদ্ধতিতে আওটিক ভাল্ভ প্রতিস্থাপনের পথিকৃৎ হিসেবে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশকে রোবটিক এনজিও প্লাস্টিক স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এবং উনি আশা করেন দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি চালু হবে।
একজন কার্ডিওলজিস্ট অপারেশন থিয়েটারের না থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে হার্টের রিং পরাতে পারবেন। তিনি ইতোমধ্যেই ইন্ডিয়া এবং চায়নাতে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন