রোজকার ব্যস্ত জীবনে আমরা যতই তাড়াহুড়া করি না কেন, রাতে বিছানায় মাথা রাখলেই একটু আরামের ঘুম সবারই দরকার হয়। আরামদায়ক ঘুমের জন্য যেমন দরকার নরম বালিশ, তেমনি দরকার পরিষ্কার বালিশের কভার।
অনেকে ভাবেন, বালিশের কভার তো চোখে তেমন নোংরা লাগে না—প্রয়োজনে কদিন পর পর ধুলেই হলো। কিন্তু জানেন কি, প্রতিদিন ব্যবহৃত বালিশের কভারে ব্যাকটেরিয়া, ধুলাবালি আর ত্বকের মৃত কোষ জমে গিয়ে এটি আমাদের ত্বক, চুল এমনকি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত বালিশের কভার না পাল্টালে চুল, ত্বক এমনকি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চলুন, জেনে নিই—একই বালিশের কভার বারবার ব্যবহার করলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং ঠিক কতদিন পরপর কভার ধোয়া উচিত।
১. খুশকির সমস্যা বাড়তে পারে
বালিশের কভারে যদি ধুলা, তেল আর খুশকি জমে থাকে, তাহলে সেটা মাথার ত্বকে গিয়ে খুশকির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মাথার চুল দুর্বল হয়, পড়ে যেতে থাকে।
২. ব্রণ ও ত্বকের সমস্যাও হয়
একই বালিশের কভারে প্রতিদিন মুখ রাখলে, সেখানে ঘাম, ধুলা, ত্বকের মৃত কোষ এবং মেকআপ জমে গিয়ে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে মুখে ব্রণ, ফুসকুড়ি বা অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
৩. ধুলা ও জীবাণুর আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে
বালিশের কভার নিয়মিত না ধুলে, সেখানে ডাস্ট মাইট নামের অদৃশ্য পোকা জন্ম নেয়। এই পোকাগুলো ত্বক ও শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর। তারা হাঁপানি বা অ্যালার্জির সমস্যাও বাড়াতে পারে।
৪. চুলেরও ক্ষতি হতে পারে
যত দামি শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন, যদি বালিশের কভার পরিষ্কার না থাকে, তাহলে চুলের ক্ষতি হবেই। কারণ, প্রতিদিন ঘুমানোর সময় আপনার চুল বালিশের সঙ্গে ঘষা খায়। আর নোংরা কভার হলে সেটাই চুল পড়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই চুল বাঁচাতে চাইলে, সাটিন বা সিল্ক কাপড়ের কভার ব্যবহার করাই ভালো। এগুলো চুলের ঘর্ষণ কমায় এবং মসৃণ রাখে।
৫. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে
নোংরা বালিশের কভারে থাকা জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে বিভিন্ন অসুখের কারণ হতে পারে। যেমন:
- হাঁপানি
- ব্রঙ্কাইটিস
- চোখ বা ত্বকের সংক্রমণ
নিজেকে সুস্থ রাখতে চাইলে, অন্তত সপ্তাহে একবার বালিশের কভার ধুতে ভুলবেন না।
বালিশ কভার কখন ও কীভাবে ধুবেন?
প্রতি ২-৩ দিনে একবার কভার বদলানো সবচেয়ে ভালো। অন্তত সপ্তাহে একবার ভালো করে ধুতে হবে। গরম পানি ও হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুলে ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
যারা মেকআপসহ ঘুমাতে যান, তাদের আরও ঘন ঘন কভার ধোয়া উচিত।
বালিশও ধুতে হবে?
হ্যাঁ, মাঝে মাঝে বালিশও ধোয়ার প্রয়োজন হয়।
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন বলছে, প্রতি ৬ মাসে একবার বালিশ গরম পানিতে ধুয়ে ফেলা উচিত – তবে অবশ্যই আগে দেখে নিন আপনার বালিশ ওয়াশারে ধোয়ার উপযোগী কি না। কিছু বালিশ শুধু ড্রাই ক্লিন করাই নিরাপদ।
একটা ছোট্ট বালিশের কভার নিয়মিত না ধুয়ে, আপনি অজান্তেই চুল, ত্বক ও শরীরের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারেন। তাই নিয়ম করে বালিশের কভার ধুতে ভুলবেন না। আর ভালো ঘুম, ভালো ত্বক আর সুস্থ চুল পেতে চাইলে সাটিন বা সিল্কের কভার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর ঘুম শুরু হোক এক কাপড় ধোয়া বালিশের কভার থেকে!
মন্তব্য করুন