রাতের পর রাত ঘুমাতে না পেরে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছেন? মনের অস্থিরতা, স্ট্রেস আর একঘেয়ে চিন্তাগুলো আপনাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না? তবে আমাদের আজকের এ লেখা আপনারই জন্যে। আপনার জন্য রয়েছে এক দারুণ খবর।
বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি ঘুমিয়ে পড়তে পারেন মাত্র ২ মিনিটেই! আর এ কৌশলগুলো শুধু মন ও শরীরকে শান্ত করেই না, বরং সঠিক অনুশীলনে নিয়মিত প্রয়োগ করলে আপনার ঘুমের মানেরও উন্নতি হবে। দেরি না করে চলুন জেনে নেই কীভাবে ১০, ৬০ বা ১২০ সেকেন্ডেই ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন যখন তখন।
১০ সেকেন্ডেই ঘুম!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন নৌবাহিনীর পাইলটদের মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব মোকাবেলায় আবিষ্কার করা হয় ঘুমানোর মিলিটারি মেথড। এ পদ্ধতিটি মূলত মার্কিন নৌবাহিনীর পাইলটদের ঘুমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। লেখক লয়েড বাড উইন্টার এটি তার বই Relax and Win–এ তুলে ধরেন। এ পদ্ধতি অবলম্বে মাত্র ৬ সপ্তাহের ঘুমের অনুশীলনে ৯৬% সফলতা পাওয়া যায়। এমনকি কফি পান করেও এ পদ্ধতি কাজে দেয় । সম্প্রতি শ্যারন অ্যাকম্যান পদ্ধতিটিকে আবার আলোচনায় আনেন। যদিও এ পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় ১২০ সেকেন্ড লাগে, আর শেষ ১০ সেকেন্ডেই ঘুম আসতে পারে।
পদ্ধতি-
চোখ, মুখ, জিহ্বা ও কাঁধ একেবারে শিথিল করে দিন। গভীরভাবে শ্বাস নিন, বাহু ও হাত শিথিল করুন। মনকে শান্ত করে একটি দৃশ্য কল্পনা করুন। যেমন- হ্রদের মাঝখানে একটি নৌকায় একা ভেসে থাকা। আর অন্য কোনো চিন্তা মাথায় উকি দিলে নিজেকে বলুন, অন্য কোনো চিন্তা করা যাবে না। দেখবেন পরের মাত্র ১০ সেকেন্ডেই ঘুমিয়ে পরবেন!
৬০ সেকেন্ডে ঘুমের ২ কৌশল
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধীর শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘুমের নিয়ম (sleep hygiene), এবং রিলাক্সেশন কৌশলগুলো অনিদ্রা মোকাবেলায় অনেক সময় ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে।
নিচের দুটি পদ্ধতি মূলত মনকে শান্ত করে। এতে করে ঘুমের সহায়তা হয়। নতুনদের জন্য এ পদ্ধতিগুলো কাজ করতে ২ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
১. ৪-৭-৮ শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতি
এ কৌশলটি তৈরি করেছেন ড. অ্যান্ড্রু উইল। তিনি একজন সমন্বিত চিকিৎসা (integrative medicine) বিশেষজ্ঞ । তিনি এ পদ্ধতিটি প্রাচীন যোগব্যায়ামের প্রাণায়াম অনুশীলনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেন। নিয়মিত চর্চায় এটি আপনার ঘুমকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তবে আপনার যদি অ্যাজমা বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)-এর মতো শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ থাকে, তাহলে এ পদ্ধতি চর্চা শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এ পদ্ধতিটি আপনার শরীরের স্নায়ুকে শিথিল করে এবং মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে শান্ত করে তোলে।
পদ্ধতি-
জিহ্বা উপরের পাটির পেছনে রাখুন।
মুখ দিয়ে পুরো শ্বাস ছাড়ুন (হু শব্দ করে)।
৪ সেকেন্ড নাকে শ্বাস নিন।
৭ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
৮ সেকেন্ডে শ্বাস ছাড়ুন।
এ উপায়ে চারটি চক্র সম্পন্ন করতে হবে। তবে যদি ৪ বারের আগেই ঘুমিয়ে যেতে পারেন, ঘুমিয়ে পড়ুন।
২. প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন (PMR)
প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন বা পেশির গভীর শিথিলকরণ দ্রুত ঘুমানোর আরও একটি কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং ঘুমে সহায়তা করতে পারে। এতে মূলত শরীরের বিভিন্ন পেশিকে কিছুক্ষণ টান দিয়ে ধীরে ধীরে শিথিল করতে বলা হয়। যা শরীরজুড়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় এবং অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতি শুরু করার আগে ধরে নিন আপনি ৪-৭-৮ শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতি অনুসরণ করছেন এবং প্রতিবার নিশ্বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীর থেকে সব চাপ বেরিয়ে যাচ্ছে। পিএমআর পদ্ধতিটি অনেকটা এমনই।
পদ্ধতি-
ভ্রু যতটা সম্ভব ওপরে তুলুন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এতে কপালের পেশি টানটান হবে। হঠাৎ সব পেশি ঢিলা করে দিন, আর পেশিগুলোতে চাপ হালকা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি লক্ষ্য করুন। ১০ সেকেন্ড বিরতি নিন। মুখ বড় করে হেসে গাল শক্ত করুন। এভাবে থাকুন ৫ সেকেন্ড। এরপর আবার শিথিল করুন নিজেকে। ১০ সেকেন্ড বিরতি নিন। চোখ বন্ধ করে চোখ কুঁচকে থাকুন ৫ সেকেন্ড। তারপর ধীরে ধীরে শিথিল করুন আপনার পেশি। ১০ সেকেন্ড বিরতি নিন। মাথা সামান্য পেছনে হেলিয়ে ছাদের দিকে আরাম করে তাকান। এবার ৫ সেকেন্ড ওই অবস্থাতেই থাকুন। তারপর ঘাড়কে বালিশে বিশ্রামে দিন। আবার ১০ সেকেন্ড বিরতি নিন। এরপর ধীরে ধীরে শরীরের নিচের অংশে যান। হাত, বুক, উরু, পা পর্যন্ত প্রতিটি অংশে একইভাবে টান ও শিথিলের প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। যদি এ পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে আপনি পুরো শরীর শেষ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন, তাও ঠিক আছে।
মনোযোগ দিন আপনার শরীর যখন শিথিল হয়, তখন সেটি কতটা ভারী ও শান্ত অনুভব করে।
২ মিনিটে ঘুমানোর সহজ কিছু বিকল্প কৌশল
যদি আগের ঘুমানোর কৌশলগুলো আপনার জন্য কার্যকর না হয়, তবে নিচের বিকল্পগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
জেগে থাকার চেষ্টা করুন (Paradoxical Intention):
ঘুম নিয়ে যাদের সমস্যা আছে বা যারা অনিদ্রায় ভোগান তাদের জন্য ঘুমানোর চেষ্টা করাটাই একটা চাপের ব্যাপার। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ইচ্ছাকৃতভাবে জেগে থাকার চেষ্টা করলে ঘুমের চাপ কমে এবং ঘুমের মান বৃদ্ধি পায়। এতে মস্তিষ্ক ঘুমানোর চাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং আপনি অনায়াসেই ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন।
মনকে শান্ত দৃশ্যে ব্যস্ত রাখুন: ঘুমাতে যেয়ে বেশি বেশি চিন্তা করার বদলে কল্পনায় নিজে কোন একটি শান্ত কিছু নিয়ে কল্পনা করুন। যেমন- ঝর্ণার শব্দ, ঠান্ডা বাতাস, সোঁদা মাটির গন্ধ। এ কল্পনায় মনকে ব্যস্ত রাখুন। শান্ত মন দুশ্চিন্তা দূর করে ঘুমকে ত্বরান্বিত করে।
অ্যাকুপ্রেশার: অ্যাকুপ্রেশারের বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করার পয়েন্টে হালকা চাপ প্রয়োগ করলে সহজেই ঘুম আসে। যেমন-
হাতের কবজির নিচে ছোট গর্তে চাপ দিন ২-৩ মিনিট। কবজির তিন আঙুল নিচে দুই টেন্ডনের মাঝখানে চাপ দিন। ঘাড়ের পেছনে মাথার গোড়ায় চাপ দিয়ে হালকা মাসাজ করুন।
এই পদ্ধতিগুলো ঘুম আসার সময় কমাতে এবং ঘুমের মান বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ঘুমানোর ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ঘুমানোর আগে মোবাইল স্ক্রিন থেকে অন্তত ৩০ মিনিট দূরে থাকুন। বিছানাকে আপনার ঘুমের জন্য আরামদায়ক রাখুন। ঘুমানোর আগে চা-কফি পরিহার করুন।
ঘুম আসছে না? কোনো চিন্তা নেই। শুধু শ্বাস নিন, পেশি শিথিল করুন আর মনটাকে শান্ত দৃশ্যে ভাসিয়ে দিন। নিয়মিত অনুশীলনে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন- ঘুমানো আসলে এত কঠিন কিছু নয়! চেষ্টা শুরু করেন আজ রাত থেকেই। হয়তো অনেকদিনের ঘুমের সমস্যা সমাধান পেয়ে যেতে পারেন। আর আজকেই আপনি ঘুমিয়ে পড়তে পারেন মাত্র ২ মিনিটে!
তথ্যসূত্রঃ হেলথলাইন
মন্তব্য করুন