বর্ষাকাল আমাদের অনেকের পছন্দের ঋতু হলেও, এটি নানা ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি নিয়ে আসে। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন, বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি, চারপাশে জমে থাকা নোংরা পানি ও মশার বংশবিস্তার—সব মিলিয়ে এই সময় যে কোনো সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।
জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চামড়ার রোগ এবং ভাইরাল ইনফেকশনের মতো সমস্যাগুলো খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া যাদের শরীর আগে থেকেই দুর্বল, যেমন—শিশু ও বয়স্করা এই সময়ে বেশি আক্রান্ত হন। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি শক্তিশালী রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এমন অনেক ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যা বর্ষাকালের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। নিচে এমনই কিছু সহজ, সস্তা ও কার্যকর ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলো, যা প্রতিদিন একটু যত্ন নিয়ে অনুসরণ করলে এই বর্ষাকালে সুস্থ থাকা অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে।
আদা ও মধুর মিশ্রণ : প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ আদার রসের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা, কাশি ও ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। কারণ আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, আর মধু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল।
তুলসী পাতা : তুলসী পাতায় আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী গুণ। ৪-৫টি তাজা তুলসী পাতা ধুয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে।
বিকল্পভাবে, তুলসী-আদা-লবঙ্গ দিয়ে হালকা চা তৈরি করেও পান করতে পারেন।
লেবু ও আমলকীর ভিটামিন সি : ভিটামিন সি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে। লেবু পানি বা আমলকীর রস নিয়মিত খেলে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস ও সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়া খুবই উপকারী।
হলুদ দুধ (গোল্ডেন মিল্ক) : এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
হলুদের কুরকুমিন উপাদান ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে।
রসুন : রসুনে অ্যালিসিন নামে একটি উপাদান থাকে যা অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। প্রতিদিন ১/২টি কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া বা রান্নায় ব্যবহার করা ভালো।
পর্যাপ্ত পানি পান ও হাইড্রেশন : বর্ষাকালে কম ঘাম হলেও শরীর ভেতর থেকে জলশূন্য হয়ে পড়তে পারে। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা খুবই জরুরি। সঙ্গে ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ভাতের মাড় ইত্যাদি পানীয় শরীরের জন্য উপকারী।
হালকা ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম : হালকা হাঁটাহাটি, যোগাসন বা প্রাণায়াম রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ৭- ৮ ঘণ্টা ঘুম রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
বাড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা : বর্ষাকালে ঘরবাড়ি স্যাঁতসেঁতে হয়ে ছত্রাক ও জীবাণুর আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে। ঘরের জানালা খোলা রেখে আলো-বাতাস ঢুকতে দিন। রান্নাঘর ও বাথরুম পরিষ্কার রাখুন।
সতর্কতামূলক পরামর্শ:
- বাইরের কাটা ফল, ফাস্টফুড ও খোলা পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- বর্ষাকালে পানি ফুটিয়ে অথবা ফিল্টার করে পান করুন।
- নখ কেটে রাখুন, হাত-মুখ ধুয়ে খান।
- পোকামাকড় ও মশা থেকে বাঁচতে মশারি বা রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন।
বর্ষাকালে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে খাবার, ঘুম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়ে যত্ন নেওয়া জরুরি। নিয়মিত এসব অনুসরণ করলে অনেকটাই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন