বয়স ৫ মাস হোক বা ৫০ বছর, রাতের পর্যাপ্ত ঘুম সবার জন্যই জরুরি। ঘুম শরীর ও মনের ভারসাম্য রক্ষা করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও মজবুত রাখে। তবে ঘুমের সময় কমে কমে যদি দিনে মাত্র তিন-চার ঘণ্টায় দাঁড়ায়, তাহলে বিপদ একেবারে দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে।
গবেষণা বলছে, সদ্যোজাত শিশুর ঘুমের সময় যেখানে দিনে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ঘুমের প্রয়োজন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা; কিন্তু বাস্তব চিত্র একদমই ভিন্ন। ব্যস্ততা, কাজের চাপ, মোবাইল-নেশা, কিংবা অনিদ্রা—সব মিলিয়ে অনেকেই দিনে ৩-৪ ঘণ্টার বেশি ঘুমোতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতি একদিনের জন্য নয়, দিনের পর দিন চললে শরীরে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে।
কম ঘুমে বাড়ে নানা রোগের ঝুঁকি
সম্প্রতি সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, কেউ যদি টানা তিন দিন চার ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান, তবে তার রক্তে এক ধরনের বিশেষ প্রোটিন তৈরি হয়, যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহই পরে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি ধমনীর ক্ষতিও করতে পারে।
গবেষকরা বলেন, অত্যধিক মানসিক চাপ, ঘুমের ঘাটতি বা শারীরিক অসুস্থতার সময় এই প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে এটির উপস্থিতি থাকলে দেখা দিতে পারে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, হার্ট ফেইলিয়র কিংবা অন্যান্য হৃদ্সংক্রান্ত জটিলতা।
কীভাবে করা হয়েছে গবেষণা
উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৬ জন সুস্থ তরুণ পুরুষের ওপর এই পরীক্ষা চালান। তাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং সূর্যালোক গ্রহণের সময় অপরিবর্তিত রেখে শুধু ঘুমের সময়সূচি বদলে দেওয়া হয়।
এক দলকে তিন দিন সাড়ে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমোতে দেওয়া হয়, আরেক দলকে দেওয়া হয় মাত্র ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। এরপর তাদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, যারা কম ঘুমিয়েছেন, তাদের রক্তে প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
শরীরচর্চাতেও মেলে না উপকার
সাধারণত নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের ক্ষতিকর প্রোটিনের মাত্রা কমে যায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, টানা কয়েক দিন কম ঘুমোনোর পর শরীরচর্চা করলেও সেই প্রোটিনের মাত্রা কমে না। অর্থাৎ, নিয়মিত ঘুম না হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেও পুরো উপকার পাওয়া যায় না।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মতোই ঘুমকেও রাখতে হবে সেই তালিকায়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন। এটি শুধু মস্তিষ্ক নয়, হৃদ্যন্ত্র, রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সারকথা
টানা তিন দিন ৪ ঘণ্টার কম ঘুম মানে শরীরে বিপদ ডেকে আনা। ঘুমের ঘাটতি শুধু ক্লান্তিই নয়, ধীরে ধীরে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি মানসিক অবসাদের মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে দিনে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন—ঘুমও একপ্রকার ওষুধ, তবে সেটি নিয়ম মেনে নিতে জানতে হবে।
সূত্র : এই সময় অনলাইন
মন্তব্য করুন