গত দুই যুগে বান্দরবান শহরে এত উচ্চতায় পানি উঠতে কেউ দেখেনি। গত ৭ ও ৮ আগস্ট জেলার ‘ম্যাঅকছি ছড়া’ এলাকায় দোতলা ভবনের ছাদ পর্যন্ত পানি উঠেছিল। ডুবে গিয়েছিল জেলার বেশির ভাগ একতলা টিনের বাড়ি। জেলার অনেক এলাকা থেকে এখনও পানি নামেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট বান্দরবান সদরে ১৫ দশমিক ৪৪ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পানি উঠেছিল। স্বাধীনতার পর এর চেয়ে উঁচুতে পানি উঠেছিল ১৯৯৯ সালের ১২ আগস্ট। তবে সে সময় পানি মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। আর এবার দু’দিনের বেশি সময় পানি দোতলা সমান উচ্চতায় স্থির থেকেছে।
গত ৩ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বান্দরবানে ৬৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি ছিল রেকর্ড। একই সময়ে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হয়েছে ৬০০ মিলিমিটার। শহরের বিভিন্ন স্থানে পানিনিষ্কাশনের পথ আটকে রাখা এবং সেতু, বাড়ি ও নানা অবকাঠামো নির্মাণ করার কারণে মূলত বৃষ্টির পানি আটকে ছিল বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিবেশ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতও একই।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেছেন, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে আগস্ট মাসে সাধারণত বৃষ্টি বেশি হয়। কিন্তু টানা এক সপ্তাহ ধরে এ ধরনের অতি ভারী বৃষ্টি আগে কম হয়েছে। এর আগে ১৯৯৯ সালের ১২ আগস্ট সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। ফলে সেবারও পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়েছিল।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বান্দরবান শহর ছাড়াও আশপাশের এলাকায় গত এক সপ্তাহ অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ওই পানি নির্দিষ্ট কিছু এলাকা দিয়ে নেমেছে। এর ফলে জেলাটিতে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকতে পারে।
বান্দরবান শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরের ম্যাঅকছি ছড়া ছিল বৃষ্টির পানি নামা এবং ধারণ করার সবচেয়ে বড় জায়গা। গত কয়েক যুগে ছড়াটির বেশির ভাগ জায়গা ভরাট ও দখল হয়েছে। সেখানে অন্তত ছয়টি পাড়া বা আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ওয়াপদা ব্রিজপাড়া, আর্মিপাড়া, হাতিমপাড়া ও কাশেম পাড়ায় কয়েক হাজার পরিবার বাস করে। অথচ ওই জায়গাটি একসময় ছিল জলাভূমি। সেখান দিয়ে বৃষ্টির পানি নেমে যেত।
মন্তব্য করুন