যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা মিয়ানমারের দুই ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়িক হিসাব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বা আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ এ বিষয়ে মতামত দিবে। এরপর এই দুটি হিসাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সোনালী ব্যাংক।
বুধবার (১৬ আগস্ট) সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম কালবেলাকে এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিকল্প ব্যাংক বা পন্থায় ব্যবসায়িক লেনদেনের ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত জুন মাসে মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত দুই ব্যাংক মিয়ানমার ফরেন ট্রেড ব্যাংক (এমএফটিবি) ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এমআইসিবি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ওই ব্যাংক দুটিতে সোনালী ব্যাংকের হিসাব বন্ধের অনুরোধ জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের অনুরোধের কথা উল্লেখ করে এই ব্যাংক দুটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বেশিরভাগই হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। মিয়ানমারের ওই ব্যাংক দুটিতে সোনালী ব্যাংকের ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ রয়েছে এবং সেখানে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও জমা রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিদেশি কোনো ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় হিসাব খুললে তাকে নস্ট্রো হিসাব বলা হয়। যে ব্যাংকে এ হিসাব খোলা হয়, ওই ব্যাংকের কাছে তা ভস্ট্রো হিসাব হিসেবে পরিচিত। এমএফটিবিতে সোনালী ব্যাংকের ১৭ হাজার ডলার এবং এমআইসিবিতে ২ লাখ ডলার জমা রয়েছে। আর সোনালী ব্যাংকে এমএফটিবির ১ লাখ ডলার এবং এমআইসিবির ১০ লাখ ডলার জমা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম জানান, হিসাবগুলোতে আপাতত কোনো লেনদেন হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে ওই দুই ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের কথা ভাবা হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে সোনালী ব্যাংক।
তিনি আরও জানান, ওই দুই ব্যাংকে বাংলাদেশের প্রায় দুই লাখ ডলার রয়েছে। আর সোনালী ব্যাংকে মিয়ানমারের ব্যাংক দুটির ১২ লাখ ডলার জমা আছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই অর্থ ব্লক করে রাখা হয়েছে। ফলে আমাদের ক্ষতি হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২১-২২ সালে মিয়ানমারে প্রায় ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ কাঠ, হিমায়িত মাছ, আদা, পেঁয়াজ, সুপারি, উলের ঝাড়ু, নারকেল, আচার, শুঁটকি, বেত, তেঁতুলের বিচি, ডাল, ছোলা ইত্যাদি আমদানি করে থাকে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে আলু, গেঞ্জি, বিস্কুট ও প্লাস্টিক পণ্য।
মন্তব্য করুন