রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সরকারকে তারেক রহমান

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ ও সাহসী ভূমিকা রাখুন

বক্তব্য রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  ছবি : কালবেলা
বক্তব্য রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : কালবেলা

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত কিছু নৃশংস ও অনাহূত ঘটনায় জনমনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্ষমতা নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু প্রশ্নে উঠেছে উল্লেখ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও স্বচ্ছ ও সাহসী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের ভূমিকা যদি আরও স্বচ্ছ এবং সাহসী হয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পাশে থাকবে।

শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আয়োজিত শহীদ স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তারেক রহমান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, হাজারো শহীদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার পূর্বশর্তই হচ্ছে- জনগণের বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকা জরুরি, যেখানে প্রতিটি ভোটার নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রয়োগ এবং চর্চার কোনোই বিকল্প নেই। এই কথাটিও একজন শহীদের অভিভাবকের মুখ থেকে তাদের ভাষায় আজ আমরা শুনেছি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা প্রশাসনিক কূটকৌশলের পরিবর্তে কারও রাজনৈতিক অভিলাস পূরণের প্রধান মাধ্যম হওয়া দরকার জনগণের রায়, জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস। দেশে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে আমাদের কোনো আয়োজনই শেষ পর্যন্ত কিন্তু কোনো কাজে আসবে না, টেকসই হবে না।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত কিছু নৃশংস ও অনাহূত ঘটনায় জনমনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্ষমতা নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। তবে সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কেউ কি দেশে উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের কথা শুনলে তা বোঝা যায়। এ বিষয়টিও জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না, কোনো কোনো মহল থেকে এমন ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপনকে আজ বিচ্ছিন্ন বক্তব্য হিসেবে বোধহয় দেখার কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রতিশ্রুত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কি না, এ ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য গণতন্ত্রকামী জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনরত দলগুলোসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ এবং সাহসী ভূমিকা রাখুন।

অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত এবং যারা এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে জনগণের হৃদয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে রয়েছেন এবং থাকবেন; ঠিক একইভাবে ২০২৪ সালে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে শহীদরাও আজীবন জনগণের হৃদয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।

কোটা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, কোটা সংস্কার ও ফ্যাসিবাদ পতনের দাবিতে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের ঠিক এই সময়টা ছিল অত্যন্ত উত্তাল। সে দিন এই সময় শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল ক্যাম্পাস ও রাজপথ। সেই সময়টিতে আমার একটা উপলব্ধি ঘটে। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূতির এই অনুষ্ঠানে সেটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম আকরামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একই দিনে কমপক্ষে ছয়জন শহীদ হওয়ার মাধ্যমে ১৬ জুলাই থেকে মাফিয়া সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে উঠেছিল। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে মূলত আন্দোলন আর কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। সারা দেশে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন মাফিয়া সরকার বেপরোয়া হত্যা আর নির্মম দমন-পীড়ন চালাতে শুরু করে। সেই মাফিয়া সরকারের গুলি-বন্দুকের ভয়কে উপেক্ষা করে বিশেষ করে ১৮ জুলাই থেকে দল-মত নির্বিশেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাজপথে সাহসের সঙ্গে নেমে এসেছিলেন, যেভাবে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন- একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সেদিন থেকে আমার চূড়ান্ত বিশ্বাস জন্মেছিল যে, মাফিয়া সরকারের পতন এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সেই উপলব্ধি এবং বিশ্বাস থেকে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সেই আন্দোলনকে ফ্যাসিস্ট পতনের একদফা আন্দোলনে পরিণত করে ফ্যাসিস্টের পতন নিশ্চিত করতে বিএনপিসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক দল পরিকল্পনা ও কৌশল অবলম্বন করেছিল। তবে কোটা সংস্কারের পথ ধরে ফ্যাসিস্ট পতনের আন্দোলন যাতে দেশে-বিদেশে কোনো একটি বিশেষ দলের আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি না পায়, এটিও নিশ্চিত করা ছিল রাজনৈতিক কৌশলেরই একটি অংশ।

তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথম দফার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০২৪ সালে। ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দ্বিতীয় কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রতি বিএনপি সম্পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল। কারণ, কোটা সংস্কারের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই বিএনপির কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই লন্ডনে দলের এক আলোচনা সভায় আমি দেশবাসীর উদ্দেশে বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলাম। সেদিন আমি বলেছিলাম, স্বাধীনতার এত বছর পরও সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অপরিণামদর্শী। বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে এই কোটা পদ্ধতি ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে, পরিবর্তন করে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে। পরবর্তীতে আমরা দেখেছি, ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২০১৮ সালে এবং পরে ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন।

তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে, হাজারো শহীদের মৃত্যুর সিঁড়ি বেয়ে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সফল হয়। আন্দোলন সফল হয়েছিল ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, শহীদ সাজ্জাদ হোসেন স্বজল, মীর মাহফুজ রহমান মুগ্ধসহ প্রায় ২ হাজার শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে। সুতরাং গণঅভ্যুত্থানে বীর শহীদরা জাতির গর্ব, গণতন্ত্রকামী-মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা। তাদের প্রতি আবারও গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি ইনসাফ ও ন্যায়ভিত্তিক এবং তাঁবেদারমুক্ত গণতান্ত্রিক-মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আজ আমরা শহীদদের প্রতি সত্যিকারভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে পারি, যা কি না একজন শহীদের বাবার বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অভ্যুত্থানে শহীদ বাঙলা কলেজের দুই ছাত্রের স্মরণে পদযাত্রা 

জুলাই অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য: ড. মোর্শেদ

দেশের সংকট মোকাবেলা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই: ডা. হারুন

নতুন ব্যবস্থাপনায় গ্রাহক-আমানত বেড়েছে ইউসিবিএলের

৪০টির বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে দেশবন্ধু গ্রুপ

মাগুরায় ফের শিশু ধর্ষণের শিকার, পরিবারের পাশে তারেক রহমান

পদ্মার ভাঙন রোধের দাবিতে গণসমাবেশ

ফেনীতে এবার নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ

ব্যস্ততা বেড়েছে নৌকা তৈরির কারিগরদের

রাজধানীর পল্লবীতে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

১০

‘এখন আমি অনেকটাই সুস্থ’

১১

স্টেডিয়ামে খাবার-পানি নেওয়ার অনুমতি, মানতে হবে ১২টি শর্ত

১২

আবাসিক হোটেলে অভিযানে গিয়ে অবরুদ্ধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা

১৩

বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে : নাহিদ

১৪

বৃহস্পতিবারের মধ্যে লঘুচাপের শঙ্কা, ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

১৫

ভৈরবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

১৬

প্রেমের গুঞ্জনে সৃজিত বললেন ‘রিল্যাক্স’

১৭

নির্বাচনের মাঠে এসে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন : জুয়েল

১৮

টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘বিনিয়োগ’ ফাঁদে ফেলে মানুষকে নিঃস্ব করত তারা

১৯

অসুস্থ জামায়াত আমিরের খোঁজ রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা

২০
X