ইলিশের প্রজনন সুরক্ষা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে শনিবার (৪ অক্টোবর) থেকে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে শুরু হয়েছে সরকারের ঘোষিত ২২ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে ইলিশ ধরা, বিক্রি, সংরক্ষণ ও পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগের দিন শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ। পদ্মার তীরে বসে শত শত মানুষ ইলিশ ভোজে মেতে ওঠেন। প্রেমিক যুগল, পরিবার ও বন্ধুদের জমজমাট উপস্থিতিতে সেখানে যেন ইলিশ উৎসবের রূপ নিয়েছিল।
রেস্তোরাঁগুলোতে উপচে পড়া ভিড়
এখানকার জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্তোরাঁয় রাত ৯টার মধ্যেই ইলিশের স্টক শেষ হয়ে যায়। শখের ইলিশ, কুটুমবাড়ি, নিরালাসহ আশপাশের প্রায় সব রেস্তোরাঁ ছিল দর্শনার্থীতে ঠাসা। শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন শিমুলিয়া ঘাট ও পদ্মা সেতু এলাকায়।
এদিন পদ্মার পাড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও নির্মল বাতাস উপভোগের পাশাপাশি ইলিশ খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘাট এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ। কেউ গল্প করছেন, কেউ দলবেঁধে গান করছেন, কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ পরিবার বা প্রিয়জনদের সঙ্গে ইলিশ ভোজে ব্যস্ত।
পুরান ঢাকা থেকে আসা রিফাত আরা বলেন, আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে এখানে এসেছি ইলিশ খেতে। জীবনে প্রথমবার এখানে এসেছি। ইলিশের দাম একটু বেশিও হলেও খুব ভালো লাগছে।
ঢাকার মোহাম্মদ এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আফজাল হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যেই ইলিশ খেতে পরিবার নিয়ে মাওয়া আসি। তবে আজ এসেছি শেষবারের মতো ইলিশ খেতে, কারণ শনিবার থেকে ধরা-বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্তত পাঁচজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার রাতেই তাদের সব ইলিশ বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রিও বেশ ভালো হয়েছে।
বাজারে ইলিশের দামে আগুন
নিষেধাজ্ঞার আগের দিন মাওয়া ও শিমুলিয়া ঘাটের আড়ত ও বাজারগুলোতে ইলিশের দাম ছিল চড়া। বড় ইলিশ কেজিপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং ছোট ইলিশ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দুদিন আগে বড় ইলিশের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা, আর ছোট ইলিশ ৬০০–৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার প্রতিটি বাজারে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা।
ইলিশ কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, শনিবার থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। তখন টাকা থাকলেও ২২ দিন ইলিশ কিনতে পারবো না। তাই এখনই বেশি করে ইলিশ কিনে রাখছি, যদিও দাম অনেক বেশি।
মাওয়া মৎস্য আড়তের বিক্রেতারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে ইলিশের সরবরাহ কম থাকলেও চাহিদা ছিল বেশ। ছোট ইলিশ হালি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। ৮০০–৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২,২০০ থেকে ২,৫০০ টাকায়। এক কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের বড় ইলিশের দাম উঠেছে ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত।
মন্তব্য করুন