

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদা, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে দূতাবাস ভবন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। পরে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এদিন সকালে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তৌফিক ইসলাম শাতিল, এনডিসি, অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। দিবস দুটি উপলক্ষ্যে দূতাবাস কর্তৃক সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি হোটেলে একটি আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয় এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জাতীয় প্রবাসী দিবস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে কাউন্সেলর (শ্রম) মিকন তংচংগ্যা তার স্বাগত বক্তব্যে প্রবাসীদের অধিকার ও কল্যাণে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দূতাবাসের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এরপর ১১ (এগারো) জন বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীকে ৬টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ক্যাটাগরিসমূহ হলো, সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী, কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতা ও কারিগরি দক্ষতা অর্জনকারী, দীর্ঘদিন ধরে একই কোম্পানিতে কর্মরত কর্মী এবং কোরিয়ান সরকার কর্তৃক পুরস্কৃত কর্মী। সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন, এরূপ ১০টি কোরিয়ান কোম্পানিকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা গ্রহণকারীরা স্মারক হিসেবে রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তারা মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার আলোকে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এসময় সাউথ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তৌফিক ইসলাম শাতিল তার বক্তব্যের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও চব্বিশের অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানান। তিনি জাতীয় প্রবাসী দিবস ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত সব প্রবাসী বাংলাদেশি ও ইপিএস কর্মীকে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের অবদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি প্রবাসীদের কল্যাণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতকরণার্থে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্তমান সরকারের উদ্যোগসমূহ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণে দূতাবাসের পরিকল্পনাসমূহ বর্ণনা করেন।
তিনি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেন।
রাষ্ট্রদূত শাতিল, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ভোটিং নিবন্ধনে কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন এবং এখনো যারা নিবন্ধন করেননি, তাদের দ্রুত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে ও ভোট প্রদান করতে উৎসাহিত করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, বৈষম্যহীন, সুখী ও সুন্দর দেশ নির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগত অতিথিদের দেশীয় খাবারের সমন্বয়ে নৈশভোজ পরিবেশনের মাধ্যমে দিবসের আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি হয়।
মন্তব্য করুন