সারা দেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে বনানী বিআরটিএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
বিআরটিএ হিসাবে সারা দেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৬ ও ঢাকায় ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৪৫ যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে।
ফিটনেসহীন এসব বাহনের মধ্যে ৩০ শতাংশ রাস্তায় চলে না জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, যেগুলো চলে, সেগুলোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি রাস্তা উন্নত হওয়ায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওভার স্পিডের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
বিভিন্ন সংগঠন দুর্ঘটনার যে তথ্য সংগ্রহ করছে তাতে গরমিল হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার তথ্য এখন নিজেরা ওয়েবসাইটে দিচ্ছি। এখন আমরা বছরখানেক ধরে রিয়েল ডাটা কালেকশন করছি। এজন্য প্রকৃত পরিসংখ্যানে সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের রোড সেইফটি প্রজেক্টও চলছে।
সড়কে তদারকিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যাও ‘যথেষ্ট নয়’ বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, তাদেরকে টার্গেট দেওয়া হয়েছে মামলার বিষয়ে, একইসাথে ছয় বিভাগীয় শহরে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট যুক্ত হবে। ওভার স্পিড, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপরাধে ড্রাইভারদের মার্কিংয়ে ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও বিআরটিএ’র পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চালকদের চক্ষু, রক্তচাপ ও র্যান্ডম ব্লাড সুগার পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, অধিকাংশ চালক উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের সমস্যায় ভুগছে। ফলে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক চালকের চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যাও পাওয়া গেছে। ২৪৯ জন চালকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ৪৭ জনের রক্তচাপ সমস্যা পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ব্লাড সুগারের সমস্যা পাওয়া যায় ৬৯ জনের, ধূমপানজনিত সমস্যা পাওয়া যায় ১০৯ জনের। এছাড়া, ২৮৯ জন চালকের চক্ষু পরীক্ষায় চোখের ভিশনে সমস্যা পাওয়া যায় ১৬৪ জনের, অন্যান্য চোখের সমস্যা পাওয়া যায় ৫৯ জনের ও চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যা পাওয়া যায় আটজনের।
আগামী ২২ অক্টোবর জাতীয় সড়ক নিরাপদ দিবস উপলক্ষে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে শিক্ষা ভবন হয়ে হাই কোর্ট মোড় পর্যন্ত, মৎস্য ভবন মোড়, ফার্মগেইট থেকে জাহাঙ্গীর গেইট হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত, সার্ক ফোয়ারা, শেরাটন মোড়, বিজয় সরণি মোড় থেকে হেলিকপ্টার মোড়, তেজগাঁও ফ্লাইওভার থেকে সওজ ভবন পর্যন্ত সাজানো হবে।
এছাড়া সাতরাস্তার মোড় থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত, হাই কোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারা, মতিঝিলের শাপলা ও বলাকা চত্বর, মেট্রো রেলের দিয়াবাড়ি থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত মূল রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথসমূহ, ফুটওভার ব্রিজ, সব স্টেশন, ইন্টারসেকশন, গোলচত্বর ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাস টার্মিনালে জনসচেতনতামূলক লিফলেট, স্টিকার বিতরণ ও ব্যানার প্রদর্শন করা হবে।
জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে ট্রাফিক আইন মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন সড়কে নিহত হচ্ছেন। এমনকি আমরাও নিরাপদ নই...আমাদের সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তা করতে হলে আমাদের সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবহন মালিক থেকে শ্রমিক ও সড়ক ব্যবহারকারী- সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা না হলে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, শুধু ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হলে ১০০ ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন। তবে আমাদের মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তাই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন